রোমান্টিক গল্প বাংলা (মদির_সুবাসে)
জীবনে প্রথমবার প্লেনে উঠতে পেরে আনতারার যেমন একদিকে ভালো লাগছিল, উত্তেজনা কাজ করছিল অন্যদিকে আবার ভ'য় কাজ করছিল। প্লেনে উঠবে, ওপর থেকে নিচের জমিন দেখবে, মেঘের ভেতরে হারিয়ে যাবে এই ভাবনাও যেমন আসছিল তার মনে, তেমনিই এমন ভাবনাও এলো, প্লেনে উঠবে, প্লেনটা আকাশে উড়বে তারপর টুপ করে নিচে পড়ে যাবে। আর তখন সব শেষ হয়ে যাবে। আনতারার এই একটা সমস্যা। পজিটিভ ভাবতে পারে না কখনো। ভাবলেও সেখানে নেগেটিভটাকে শেষ পর্যন্ত টে'নে আনবেই। তার এমন কাজে বাবা-মা, বড় ভাইয়া, বড় আপা, মেজো আপা, সেজো আপা, ছোট ভাইয়া সবাই খুব বি'র'ক্ত হয়। অনেক বার তাকে বোঝায় যে ভালো ভালো চিন্তা করো, ভালো চিন্তা করলে ভালো হবে। আর ম'ন্দ চিন্তা করলে ম'ন্দই হবে। কিন্তু যেটা লাউ সেটাই কদু। আনতারার মন থেকে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা দূর করানো যায় না। সে ঘুরেফিরে ওই নেগেটিভেই ফিরে যাবে। এটা নিয়ে ভাই-বোনেরা মজা করে বলে, 'র'ক্ত নেগেটিভ তো তাই চিন্তাভাবনাও নেগেটিভ!' আনতারারও মনে হয় এই নেগেটিভ চিন্তা ভাবনার পেছনে তার এ নেগেটিভ র'ক্তের গ্রুপের দো'ষ আছে। যা হোক!
আনতারা সিলেটে এসেছিল। ছোট মামার বাড়িতে। দশ দিন আগেই এসেছে। বেড়ানোর জন্যই। অনার্সের ফাইনাল এক্সাম দিয়েই সে ঘর ছেড়েছে। এবার মু'ক্ত স্বাধীন হয়ে ঘুরবে তাই। কিন্তু তার পরিবারের বোধ হয় সেটা পছন্দ নয়। তারা তাকে এখন সবচেয়ে বড় খাঁচায় ব'ন্ধী করতে চাইছে। যে খাঁচাতে একবার ঢুকলে জীবন ভর আ'ট'কে থাকতেই হয়। আনতারা অনেক বুঝিয়েছে বাবাকে। এখনই বিয়েটা করবে না। সে প্রস্তুত নয় বিয়ের জন্য। কিন্তু বাবার এক কথা!
-'সেই কবে তোমাকে রাইয়্যানের বাবা-মা আংটি পরিয়ে দিয়ে পাকা কথা সেড়েছেন। তুমি বলছ এখনও প্রস্তুত হও নি? তোমার উচিত ছিল তখন থেকেই প্রস্তত হওয়া। হওনি যখন সেটা নিশ্চয়ই তোমারই ভুল। এখন সেটা বলে লাভ নেই। রাইয়্যানের হাতে এখন সময় হয়েছে। সবাই চাইছে বিয়েটা সেড়ে নিতে।'
এরপরে আর কিছু বলার থাকে না। আনতারা চুপ করে ছিল। রাইয়্যান নামক অপরিচিত লোকটাকে সে পছন্দ করে না। এর জন্যই তাকে এত জলদি আ'ট'কা পড়তে হচ্ছে। রাইয়্যানকে সে রা'গ করে ছবিতে পর্যন্ত দেখেনি। ফেসবুক আইডিতেও শখ করে খোঁজেনি। আনতারার কোনো শখই নেই রাইয়্যানকে দেখার। ছোট ভাইয়া বারবার বলেছে দেখতে একটু ম'ন্দ হলেও মানুষ ভালো। বয়সটা একটু বেশি। তেত্রিশ বোধ হয়! আনতারার বাবার উপর অ'ভি'মা'ন হয়। বাবা কেন এমন করেন? বড় তিন বোনেরও একটু বয়স বেশি লোকের কাছে বিয়ে দিয়েছেন।
ঠিক আছে, দুলাভাইরা মানুষ ভালো। আপারা সুখে আছে। কিন্তু তারপরেও! আনতারার নিজস্ব পছন্দ বলতে কিছু তো থাকতে পারে। আপারা নাহয় এত ভাবেনি কিন্তু সে তো ভাবে। আপারা ভাববেও বা কীভাবে! তাদের যুগে তো সামান্য স্মার্ট ফোনটাই ছিল না। তখনও বাবা-মায়ের মতে ছেলে মেয়ে বিয়ে করে নিতো। আনতারা তার বাবা-মায়ের বেশি বয়সের সন্তান। তার ছোট ভাইয়ার বয়স পঁয়ত্রিশ। আনতারার থেকে দশ বারো বছরের বড়। আবার তাদের একেবারে বড় ভাইয়ার বয়স তেতাল্লিশ। আর তার বাবার বয়স সত্তর ছুঁইছুঁই। আসল কথা, এই বৃদ্ধ অথচ শ'ক্ত মনের বাবার কথার অমতে সে কখনো কিছু বলতে পারে না। সেই সা'হ'সই তার নেই। তাই যত রা'গই করুক! দিন শেষে বাবা যা বলেন মুখ বুজে সেটাই মেনে নেন। আজও তাই হচ্ছে। রাইয়্যানের সাথে আজ তার আকদ হবে। এরপর বড় করে অনুষ্ঠান হবে দুই দিন পর। হুট করেই সব ঠিক হয়েছে। তাই এখন তাকে জলদি ঢাকা ফিরতে হবে। কিন্তু আকাশপথ ছাড়া সম্ভব না জলদি যাওয়া। টাকা পয়সার ব্যাপার না কিন্তু মূল ব্যাপার হলো আনতারার ভ'য়ের। এই ভ'য়ের জন্য ভিসা, পাসপোর্ট থাকার পরেও সে ফ্যামিলির সাথে সুইজারল্যান্ড যেতে পারেনি। সবই ঠিক ছিল, সেও একে ওকে বলে বেড়াচ্ছিল সুইজারল্যান্ড যাচ্ছে। কিন্তু যখন আবার তার মনে হলো কয়েক ঘন্টা প্লেনেই থাকতে হবে চাইলেও নিচে নামতে পারবে না আর প্লেনও যদি ক্র্যাশ করে! এসব হাবিজাবি ভেবে সে কান্নাকাটি শুরু করে দিল না যাওয়ার জন্য। সে সবার সাথে গেল না। তার জন্যে পরে বাবা-মাও থেকে গেল। শুধু ভাই আর বোনেরা তাদের জীবনসঙ্গীদের নিয়ে ঘুরে এসেছিল। আজকেও সে আসবে না বলে চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ছিল। কিন্তু সবাই তাকে বুঝালো কয়েক মুহূর্ত মাত্র। কিচ্ছু হবে না। চোখের পলকে! একটু সা'হ'স করতেই হবে। নাহলে জীবনে কখনোই তার বিদেশ যাওয়া হবে না। যদিও প্লেনে চড়ার ভ'য় আছে কিন্তু বিদেশ যাওয়ারও অনেক শখ তার। গতবার সুইজারল্যান্ড প্ল্যান ক্যান্সেল করে তার নিজেরই বুক ভাঙা কান্না পাচ্ছিল। আফসোসেই সে তখন প্রায় ম'রে যাচ্ছিল। তাই মনকে শ'ক্ত করে এবার প্লেনে শেষমেষ উঠল।
এখন পর্যন্ত সব ঠিক। প্লেন ছাড়বে আর কয়েক মিনিটের মধ্যে। তার এতক্ষণে বেশ কিছু সেলফি তোলা হয়ে গেছে। আকাশে যখন প্লেন উঠবে তখনও কিছু স্ন্যাপ নিবে বলে ঠিক করে রাখল। সে বেশ সা'হ'স মনে এনে চুপচাপ উইন্ডো সিটের পাশে বসে আছে। এখন পর্যন্ত তার ভালোই লাগছে। দেখা যাক পরে কি হয়!
দুই মিনিট পার হতেই কেউ একজন এসে তার পাশে বসল। সে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। একটা সুদর্শন পুরুষ মানুষকে নিজের পাশে দেখে সে ভাষাহারা হয়ে পড়ল। ফর্মাল স্যুটে রয়েছে লোকটা। চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। মুখে গাম্ভীর্য বিদ্যমান। হাতের ঘড়িটা চকচক করছে। ঘড়িটা দেখে তার মনে পড়ল যে তার ছোট ভাইয়ারও এমন একটা ঘড়ি আছে। ভাইয়ার সেই ঘড়িটার দাম লাখের ওপরে। আনতারা একবার ধরতে গিয়েছিল ভাইয়া তা দেখে মহা ধ'ম'ক দেয়। তারপর আর সেই ঘড়ির ধারে কাছেও যায়নি সে। ভাইয়া তার প্রিয় জিনিস কাউকে ধরতে দেয় না। এমনকি ভাবীকেও না। সেই ভাবী যার জন্যে ভাইয়া দেবদাস হয়ে ছিল তিন বছর!
অ্যানাউসমেন্ট হচ্ছে। সিটবেল্ট বেঁধে নিতে বলছে। একটু পরেই প্লেন টেক অফ করবে। আনতারা দিশেহারা হয়ে পড়ল। আজ অব্দি গাড়ির সিটবেল্টটা ঠিকঠাক বাঁধতে পারেনি। আর এটা তো প্লেনের সিটবেল্ট! প্লেন ভেবেই সে বেশি দিশেহারা হয়ে উঠল। এদিকে টেক অফ করবে করবে। সে এতটাই উত্তেজিত হয়ে উঠল যে ক্রু কে ডেকেও বলছেনা কিছু। তার হাত অসম্ভব কাঁ'পছে। সে কাঁ'পা হাতে সিটবেল্টটা ধরল। একবার, দুইবার চেষ্টা করল। না! পারছেই না। তার চোখ ভিজে আসছিল। পাশে থাকা লোকটা বোধ হয় বুঝল। সে হুট করেই আনতারার হাত থেকে সিটবেল্টটা নিয়ে ভালো করে লাগিয়ে দিল। আনতারার তখনও বুক কাঁ'প'ছিল। সে লোকটার দিকে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকালো। কিন্তু লোকটি ততক্ষণে আবারও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সোজা সামনের দিকে। আনতারার মুখ থেকে থ্যাঙ্কস শব্দটাও বের হলো না। প্লেন চলা শুরু করেছে এখনও ওপরে উঠেনি। আনতারার ভ'য়ে বু'ক ধড়ফড় করতে লাগল। কি করবে ভেবে পেল না। এবার নিশ্চয়ই ম'রে যাবে। সে চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলল। বাম হাতটা সিটের হাতল শ'ক্ত করে চে'পে ধরল আর ডান হাত পাশে বসে থাকা লোকটার হাতের উপর চে'পে ধরল। লোকটা তার এহেন কান্ডে বিস্মিত হলো। অবাক চোখে তাকিয়ে রইল তার দিকে কিছুক্ষণ। তারপর কি মনে করে নিজে থেকেই আনতারার হাতটা মু'ষ্টিব'দ্ধ করে নিল। আনতারা যেন ভরসা পেল। সেও তাকে আরেকটু আকড়ে ধরল। এক সময় সব স্বাভাবিক হলো। আনতারা হাঁপাতে লাগল। লোকটা তাকে পানি দিল। পানি খেতে গিয়ে জামা ভিজিয়ে ফেলল। সেদিকে তার হুশ নেই। সে কান্নাভেজা চোখে লোকটার দিকে তাকালো। এবার লোকটাও তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। সে ফুঁ'পিয়ে উঠে বলল,
-'আমি আসলে প্রথমবার প্লেনে উঠেছি। ভ'য় পেয়েছি তাই এমন রিয়েক্ট করে ফেলেছি। সরি! প্লিজ কিছু মনে করবেন না।'
লোকটার গম্ভীর মুখে এতক্ষণে একটু হাসির দেখা দিল। সে মৃদু হেসে বলল,
-'ইটস্ ওকে। এরকম হয়ে থাকে।'
লোকটার হাসিতে কিছু ছিল। যার কারণে আনতারা সেই হাসিতে ফেঁ'সে গেল। আর খুব বা'জে ভাবেই ফাঁ'সল। সে ভুলে গেল তার জানালা দিয়ে নিচের জমিন দেখার কথা, মেঘের কয়েকটা স্ন্যাপ নেওয়ার কথা। সে শুধু বারবার আড়চোখে লোকটার দিকে তাকালো। সত্যি বলতে তার ভ'য় তখনও হচ্ছিল। এই না প্লেনটা নিচে পড়ে যায়! কিন্তু সেই সাথে সে একটু একটু করে সা'হ'স পাচ্ছিল। পাশে থাকা লোকটাকে দেখেই তার মনে একটু একটু করে সা'হ'স সঞ্চয় হচ্ছিল। সেই সাথে তো একমনে মহান আল্লাহ কেও স্মরণ করছিল। সব মিলিয়ে তার একটু নির্ভার লাগছিল।
ক্রু টুকিটাকি নাস্তা দিল। সে একটু খেয়েই রেখে দিল। খেতেও ভালো লাগছিল না। কখন নামবে সেই চিন্তাও যেমন করছিল আবার পাশের লোকটার সাথে আর অল্প কিছু সময় থাকবে মাত্র সেই চিন্তাও করছিল সে। একটা উভয়সং'ক'টে পড়ল সে। এর মধ্যে একবার লোকটার সাথে তার চোখে চোখে পড়ে। সে ল'জ্জা পেয়ে সাথে সাথে চোখ সরায়। সময়টা কীভাবে যেন চলে গেল! অ্যানাউসমেন্ট হচ্ছে এখনই প্ল্যান ল্যান্ড করবে। তার বুকটা কেঁ'পে উঠল আবারও। এখন ভ'য় হচ্ছে প্লেনটা ঠিকঠাক ল্যান্ড করতে পারবে কিনা! উফ! তার আবারও দ'ম'ব'ন্ধ'কর অনুভূতি হচ্ছিল। সে এবার আর পাশের লোকটাকে আকড়ে ধরল না। লোকটা নিশ্চয়ই তাকে পঁ'চা মেয়ে ভাববে। গায়ে পড়া মেয়ে ভাববে। তার আবারও কান্না আসছিল। বারবার বাবার কথা মনে পড়ছিল। বাবাকে পাশে চাইছিল। অথচ বাবার উপরেই তার রা'গ আবার! প্ল্যান ল্যান্ড করার আগে মুহূর্তেই হঠাৎ করেই পাশের সেই লোকটা নিজে থেকে আনতারার হাতটা ধরল। আনতারা ভরসার হাতটা পেয়ে স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে। তার যে কি ভালো লাগছিল সেই সময় তা সে ভাষায় বোঝাতে পারবে না।
প্লেন ল্যান্ড করল ঠিকঠাকভাবে। আনতারা হাঁ'ফ ছাড়ে। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে একমনে আলহামদুলিল্লাহ্ জপতে থাকে। আর টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে। কিছু সময় লাগিয়ে নিজেকে ঠিক করে পাশে তাকাতেই খেয়াল করল লোকটা নেই। প্লেনের সব যাত্রী নেমে পড়ছে এক এক করে। লোকটা এত দ্রুত নেমে গেল? একবার তার থেকে বিদায় নিল না! তার মনটা খা'রা'প হয়ে গেল। তারপর আবার এটাও মনে হলো, সে কে? বিদায় নিবে কেন তার কাছ থেকে! এমনিতেও খুব জ্বা'লিয়েছে সে মানুষটাকে। নেহাৎ ভদ্রলোক ছিল। অন্য কেউ হলে তো ফিরেও চাইত না একটু সাহায্য করার জন্য। বরং সুযোগ নিতো। আনতারা ধীরে ধীরে সময় লাগিয়ে প্লেন থেকে নামে।
এয়ারপোর্টের বাহিরে আসতেই বাবাকে আর ছোট ভাইয়াকে দেখতে পায় সে। দৌঁড়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেল। বাবার বুকে হামলে পড়ে কেঁ'দেই দিল। কেন এত কাঁদল সে নিজেও জানে না। বাবা ভাবল অনেক ভ'য় পেয়েছে তাই কেঁদেছে। ছোট ভাইয়াও সেটাই ভেবে নিল। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। আনতারার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে গাড়ির ডিকিতে তুলল। তারপর তারা সবাই গাড়িতে উঠে বসল। বাবা পেছনে আনতারার সাথেই বসল। আনতারার বারবার চোখ ভিজে আসছিল। একটা অচেনা, অজানা পুরুষের জন্য! যে মাত্র কয়েক মুহূর্তের সফরসঙ্গী ছিল তার! সে টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতেই বাহিরে তাকালো। দেখতে পেল সেই লোকটা একটা গাড়িতে উঠছে। আনতারা ঝটফট কাঁচ নামালো জানলার। তাদের গাড়িটা চলতে শুরু করেছে। সে যেতে যেতেই দেখল সেই ভালো মানুষটা গাড়িতে উঠে পড়েছে। আর দেখার অবকাশ পেল না। তাদের গাড়িটা বেশ দ্রুতই ছুটেছে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য।
বাসায় ফিরে আরেক দফা কাঁদল আনতারা। এবার সবাই ভাবল হয়তো বিয়ের জন্য কাঁদছে। সবাই বোঝালো এত কাঁদার কিছু নেই। বিয়ে একটা সামাজিক প্রক্রিয়া। সবাইকেই পালন করতে হয়। তাছাড়া বাবা-মায়ের বয়স হয়েছে। এখন তাদের খুশির জন্য হলেও তার বিয়েটা করে নেওয়া উচিত।
আনতারা তারপর নিজের মনকে বুঝিয়ে প্রথমে গোসল সাড়ে। তারপর ভাবীরা তাকে শাড়ি পরিয়ে দেয়। শাড়ি পরানোর পর তার মা এসে নিজ হাতে তাকে ভাত খাইয়ে দিলেন। সে তখনও কেঁদে দিল। এবার কাঁদল বাবা-মায়ের জন্য। তাদের বয়স হচ্ছে এই কথাটা কেন সবাই বলছে? সে চায়না তার বাবা-মা এত দ্রুত তার জীবন থেকে হারিয়ে যাক। বাবা-মায়ের বয়স হচ্ছে কিন্তু সে তো ছোট। সে তো বাকিদের তুলনায় খুব কম সময়ই পেয়েছে তাদের!
সন্ধ্যায় রাইয়্যানরা এলো। আটটার আগেই আকদ সম্পন্ন হলো। কবুল বলার সময় আর সাইন করার সময় আনতারা খুব কাঁদল। নয়টার দিকে খাওয়া দাওয়ার একটু আগে আনতারাকে তার বড় ভাবী তার রুমে নিয়ে গিয়ে বলল রাইয়্যান আসছে কথা বলতে। আনতারা অ'স্ব'স্তি, ভ'য়ে পড়ে গেল। উফ! এখনই কথা বলার কি দরকার?
ভাবী যাওয়ার ত্রিশ সেকেন্ড পর রুমের দরজা খুলে কেউ একজন প্রবেশ করল। আনতারা না চাইতেও চোখ তুলে তাকিয়ে যাকে দেখল তাকে দেখার পর সে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। চোখ গুলো যেন তার কটোর থেকে বেরিয়ে আসবে এই অবস্থা হচ্ছিল। এ তো প্লেনের লোকটা!
রাইয়্যান হাসল আনতারাকে দেখে। এগিয়ে এসে বলল,
-'আপনি সবসময় এত ভীত থাকেন নাকি?'
আনতারার মুখে যেন কেউ তালা মে'রে দিয়েছে। সে কথা বলতে পারল না। অথচ গম্ভীর লোকটা কত কথা বলছে। আনতারাকে চুপ করে থাকতে দেখে রাইয়্যান বলল,
-'আপনি এত কাঁদলেন কেন? আমার মনে হচ্ছিল বিয়েটা আপনাকে জোর করে দেওয়া হচ্ছে।'
আনতারা কিছু বলল না। তার চোখ ছলছল করে উঠল। রাইয়্যান বিস্মিত হয়ে বলল,
-'আপনি কাঁদছেন কেন?'
আনতারা হাত দিয়ে চোখ মুছল। এতে তার চোখের কাজল লেপ্টে গিয়ে বি'তি'কি'চ্ছি'রি অবস্থা হলো। রাইয়্যান মুঁচকি হেসে পকেট থেকে নতুন রুমালটা বের করল। তার বিয়ের রুমাল! আর বিয়ের রুমাল দিয়ে সে প্রথমেই বউয়ের চোখের লেপ্টানো কালি গুলো মুছে দিল। তারপর আনতারার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল একদৃষ্টিতে। হঠাৎ খুব গম্ভীর স্বরে বলল,
-'আপনি আমায় আগে দেখেন নি?'
এবার আনতারা কথা না বললেও মাথা নাড়ল। রাইয়্যান আগের থেকেও শীতল, গম্ভীর গলায় বলল,
-'তাহলে আপনি আসার সময় গাড়ি থেকে আমাকে ওভাবে দেখছিলেন কেন?'
আনতারা চমকে উঠল। বলল,
-'এমনিতেই আসলে!'
-'আমি আপনাকে ঠিকই চিনেছি। এটাও বুঝতে পেরেছি আপনি আমায় চেনেন নি। কিন্তু আপনি আমাকে ওভাবে দেখছিলেন বলে আমার রা'গ হচ্ছিল। কেন জানেন?'
আনতারা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো,
-'আমি স্পষ্ট বুঝেছিলাম আমার হবু বউ কাউকে মন দিয়ে ফেলেছে। আর সেটাই আমর স'হ্য হচ্ছিল না। যদিও তার হবু বরও আমি ছিলাম, পছন্দের মানুষটাও আমিই ছিলাম। কিন্তু তারপরেও! আমার খুব হিং'সা হচ্ছিল! ট্রাস্ট মি!'
আনতারা ফিক করে হেসে দিল। রাইয়্যান রা'গী চোখে তাকিয়ে বলল,
-'আমি হাসির কিছু বলিনি। অযথা হাসাহাসি করা মানুষ আমার পছন্দ না। অযথা কান্নাকাটি করা মানুষও আমার পছন্দ নয়।'
আনতারা চুপ হয়ে গেল। রাইয়্যান হঠাৎ করেই আনতারা কোমর টে'নে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। তারপর পরম আবেশে আনতারার কপালে চুমু এঁকে বলল,
-'কিন্তু তারপরও আপনাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। কারণ কী?'
আনতারা কি বলবে বুঝতে পারল না। সে অপলক রাইয়্যানের দু চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। আশ্চর্যজনক ভাবে সে রাইয়্যানের মনের কথা পড়তে পারছে। পড়তে পেরেই বোধ হয়! ল'জ্জা পেয়ে মুখ লুকালো তার বুকের মাঝে।
তার ছোট ভাইয়ার উপর রা'গ হচ্ছে। সে যেমন বিবরণ দিয়েছিল তার কিছুই মিলছে না। তার এখন আফসোস হচ্ছে। আরো আগে যদি লোকটাকে দেখত, চিনত তবে আজ সে চেনা মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে আসতে পারত!
#মদির_সুবাসে
ইনশিয়াহ্ ইসলাম(কালেক্টেড)