রোমান্টিক গল্প (রঙ_তুলি_ক্যানভাস)

 রঙ_তুলি_ক্যানভাস



বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য খুব চাপ দেওয়া হচ্ছে। বাবা-মা আর আপাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না এখন আমি বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত নই। তারা খামোখা এখন এসবে আমাকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু কে শোনে আমার কথা! কেউই আমার বারণ শুনল না। উল্টো আমার মতের তোয়াক্কা না করে মেয়ে দেখে এসেছে। বাবার দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাইয়ের বন্ধুর মেয়ে। দেখতে নাকি সুন্দরী এবং শিক্ষিতা। আমার অবশ্য আগ্রহ জন্মায়নি। আসলে কিছুতেই আমার আজকাল আগ্রহ জন্মায় না। প্রিয়া ছেড়ে যাওয়ার পর আমি আসলে আর কাউকে জীবনে জড়ানোর চিন্তা করিনি। আমার এগারো বছরের প্রেম ছিল সে। হুট করেই কি হলো জানিনা! 


আমার আর ওর প্রেমের শুরু স্কুলেই। আমি আর ও স্কুল কলেজ একসাথেই কাটিয়েছিলাম। শেষে আলাদা হতে হয়েছিল অবশ্য, এডমিশন টেস্টের পর আমার ঠিকানা হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজে আর ওর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রেমটা কিন্তু তখনও চলছিল। এই তো! একদিন ও আমার ক্যাম্পাসে আরেকদিন আমি ওর ক্যাম্পাসে গিয়ে বসে ওর সাথে বাদাম খেতাম, চা খেতাম। ফুচকা, ভেলপুরি, ভর্তা এসব কিছুও বাদ যেতো না। কোনো কোনো দিন ফাইভ স্টারে নিয়ে যেতাম ওকে। ওর ফাইভ স্টারে যেতে ভালো লাগত। আমার অবশ্য লেকের ধারে বসে চা খেতেই বেশি ভালো লাগত। উহু! ভাববেন না আমি কিপটে দেখে এই কথা বলছি। আসলে ফাইভ স্টারে গেলে সেই অনুভূতিটা আসত না যা লেকের ধারে বসলে পেতাম। মন খুলে হাওয়া বাতাস গ্রহণ করতে পারতাম না। আমার কাছে ওসব ফাইভ স্টার বদ্ধ বদ্ধ লাগত, লাগত বলছি কি! এখনও লাগে। কিন্তু আমার জীবনটা এখন এসবেই আটকে গেছে। দিন রাত হসপিটালে ডিউটি করি, প্রায় সময় কলিগদের সাথে একটা ফাইভ স্টারে চলে যাই ডিনার কিংবা লাঞ্চ করতে। মাঝে মধ্যে বাবার সাথে অফিসের কাজে গেলে কিংবা কোনো মিটিং অ্যাটেন্ড করতে হলেও এখন ওই ফাইভ স্টারই ভরসা। থাক, ফাইভ স্টার কথন আজ রাখি। আজ যে কথা বলছিলাম সেটাই বলি।


প্রিয়া আর আমি বিসিএস একই বছরে দিয়েছিলাম প্রথম বার। প্রথমবার! বুঝতেই পারছেন আমাকে আবারও দিতে হয়েছে বিসিএস। হ্যাঁ দিয়েছি, তবে আমি দিলেও প্রিয়া দেয়নি। দিবে কেন? ওর প্রথমবারেই হয়ে গিয়েছিল। প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত লিখে সেদিন যখন ও ফেসবুকে পোস্ট দিলো আমি কংগ্রাচুলেট করলাম। ও আমাকে ধন্যবাদ টুকু দেয়নি। ধন্যবাদ তো দূরের কথা ও আমাকে সেদিন একটি বার সান্ত্বনা দিতে আসেনি। বরং সেই পোস্টের দুই ঘন্টা পরই আমাকে সে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো এমনকি কন্ট্রাক্ট নাম্বার, সবকিছু থেকেই ব্লক করে দিয়েছিল। কেন করেছিল সেই কারণটি আজও আমার অজানা। শুরুতে জানার জন্য খুব বেশি উদগ্রীব ছিলাম। কত পেছন পেছন ঘুরেছি অপমান আর লাঞ্ছনা ছাড়া আর কিছুই প্রাপ্তি করতে পারিনি। এরপর আশা ছাড়লাম। না ছেড়ে উপায় আছে আর কোনো? বিয়ে করে নিয়েছিল সে। আমার তার জন্য যতই প্রেম ভালোবাসা থাকুক না কেন! সে বিবাহিতা জানার পর তাকে শুধু শুধু বিরক্ত করা এবং ভালোবাসা দুটোই যে বেমানান। এরপর আরো কিছু বসন্ত পার হয়েছে। বিসিএসের পরীক্ষায় প্রথমবারের পর আমি দ্বিতীয়বারও বসলাম। সেবার প্রথমবারের থেকেও বাজে ফলাফল হয়েছিল আমার। এদিকে আমার এই ফলাফলে আমি যতটুকু না চিন্তিত তার চেয়েও অধিক চিন্তায় চিন্তায় কাহিল হচ্ছিল আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী। তাদের কথা ভেবেই তৃতীয়বারে একেবারে সুযোগ বুঝে কোঁ'প মে'রে'ছি। ইশ! কথাটা বি'শ্রী মনে হয়ে গেল তাই না? আসলে আমার বন্ধু শিহাব সবসময় এসব কথা বলে আর তার সাথে থাকার সুফলে এখন এসব আমিও বলি। 


দরজায় নক হচ্ছে, একবার, দুইবার, তিনবার। আমি ওপাশের জনকে পারমিশন দিলাম রুমে প্রবেশ করার জন্যে। সহকারী আফতাব দরজায় দাঁড়িয়েই বলল,


-'স্যার! একজন দেখা করতে এসেছেন।'


-'পেশেন্ট?'


-'না স্যার। বলল তো আপনার সাথে ব্যক্তিগত কারণে সাক্ষাৎ এর জন্য এসেছেন।'


আমি অবাক হলাম। সাধারণত হসপিটালে কেউ আসেনা আমার সাথে ব্যক্তিগত কোনো ব্যাপারে আলোচনা করতে। বাড়িতেই আমি এমন আলাপচারিতা সম্পন্ন করি। হঠাৎ কার এত গরজ পড়েছে? ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে গেল সকালেই বাবা বলেছিলেন মেয়েটি আজ আসছে আমার সাথে দেখা করতে। মেয়েটি বলতে শান্তি। শান্তি, যার সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে। শান্তির সাথে দেখা করার আগ্রহ বর্তমানে আমার নেই। তবে তাকে ফিরিয়ে দেওয়াটাও ভদ্রতার কাতারে পড়ে না। তাই দেখা করার পারমিশনটা দিয়েই দিলাম। 


মিনিট দুয়েক পর দরজায় কড়া নাড়ল কেউ। মি'থ্যে বলছিনা, ওই সামান্য কড়া নাড়ার শব্দেই আমার হৃদয়ের গভীরে একটা অন্যরকম পুলক অনুভব করছিলাম আমি। এমনকি এটাও উপলদ্ধি করলাম যে আমার শরীর ঘামছে। এসিটা কি চলছে না? না, এসি তো চলছে। তবে? আমি পুলকের সাগরে ভাসতে ভাসতে রুমে প্রবেশের অনুমতি দিতেই ভুলে গেলাম। তবে শান্তি বোধ হয় আমার অনুমতির ধার ধারেনি। নক করে নিজেই ঢুকে পড়েছে। তাকে দেখে আমি কিছুক্ষণ তব্দা খেয়ে বসেছিলাম। উহু, লাভ এট ফার্স্ট সাইট নয়! এই মেয়েটি আমার চেনা তাই তব্দা খেয়েছি। এখন চেনা হলেই তো কেউ তব্দা খাবে না? নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এখানে কোনো ঘাপলা রয়েছে। এক বছর আগে একটা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক হজ করতে গিয়েছিলেন। তার সেই সাবজেক্টটা গেস্ট টিচার হিসেবে আমি দুই মাস পড়িয়েছিলাম। আর তখন একটা অদ্ভুত স্বভাবের মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। থার্ড ইয়ারের ক্লাস নেওয়ার সময় আমি প্রায় লক্ষ্য করতাম একটা মেয়ে পেছনের সারির একটা সিটে বসে সবসময় ঘুমাতো। হ্যাঁ, ঘুমাতো। সবারই জানার কথা মেডিকেল লাইফ কতটা হার্ডওয়ার্কের উপর চলে। একটা মেডিকেল স্টুডেন্টকে কতটা এক্টিভ থাকতে হয় তা সাধারণ মানুষও বুঝবে। আর সেখানে এই মেয়েটি এমন এমন ইম্পোর্টেন্ট টপিকের উপর করা ক্লাসে ঘুমিয়ে থাকত। আমি প্রথম প্রথম ব্যাপারটা লক্ষ্য করার পর কিছুই বলিনি। ভেবেছিলাম সে হয়তো আমার ক্লাসটা পছন্দ করছে না। এছাড়াও আরেকটি কারণ ছিল আমি নতুন টিচার তারউপর গেস্ট! আমার এত মাথা ঘামানোর দরকার কী! কিন্তু কৌতূহলী মন তো আর শুনল না।  মনের জন্য-ই তাকে একদিন ডাকলাম। ডেকে প্রশ্ন করলাম,


-'তুমি কি অসুস্থ?'


মেয়েটি দু পাশে মাথা নাড়ল। অর্থাৎ সে সম্পূর্ণ সুস্থ। আমি তাকে পুনরায় প্রশ্ন করলাম,


-'তাহলে তুমি ঘুমাচ্ছ কেন?'


মেয়েটি নিষ্প্রভ গলায় জবাব দিলো,


-'আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।'


আমার কাছে তার এমন কথা বলার ধরণটা ভালো লাগেনি। তারপরেও সেটা নিয়ে কিছু বলিনি। বলেছি,


-'তুমি কি জানো, কতটা দরকারি একটা টপিক আমি পড়াচ্ছি? এখন তুমি যদি মনোযোগ না দাও তবে তো তুমিই পিছিয়ে পড়বে। ইটস্ মেডিকেল লাইফ, ইউ হ্যাভ টু বি মোর ফোকাসড্,এক্টিভ।'


-'স্যরি স্যার বাট আই কান্ট। আর হচ্ছে না আমার দ্বারা।'


আমি বুঝলাম সমস্যা তো একটা আছেই। নিশ্চয়ই মেয়েটি শেয়ার করবে না। তাই আর তেমন কিছু বলতে আগ্রহ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আমাকে অবাক করে মেয়েটা যেন নিজেকে ভেঙে চুড়ে বলল,


-'স্যার আমি আর্ট করতেই পছন্দ করি। রঙ, তুলি, ক্যানভাসে মত্ত্ব থাকতেই আমি ভালোবাসি। মেডিকেল কিংবা সায়েন্স কখনোই আমার টার্গেট ছিল না। বাবা বললেন সায়েন্স না নিলে এই সমাজে ভ্যালু নেই। তাই ভ্যালু রাখবার জন্য সায়েন্স নিলাম। তারপর এডমিশন টেস্টে যখন ডিইউতে চারুকলা বিভাগে পড়ার স্বপ্ন দেখছিলাম বাবা বললেন, 'হ্যাভ ইউ লস্ট ইউর মাইন্ড? সায়েন্স ব্যাগগ্রাউন্ড নিয়ে এত ভালো জিপিএ নিয়ে কেউ চারুকলাতে পড়ে? তুমি হবে ডাক্তার। বংশে তোমার ভাই বোনেরা সবাই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, তোমাকেও তাই হতে হবে।' এরপর বসলাম ভর্তি যু'দ্ধে। আমার খুব কমন পড়েছিল কিন্তু আমি কোনো মতেই মেডিকেলে পড়ব না এই সংকল্প করেছিলাম। তাই অনেক প্রশ্নের উত্তরই সেদিন জানা সত্ত্বেও দিয়ে আসিনি। চল্লিশ ওঠানোর ইচ্ছাও আমার ছিল না। কিন্তু যদি ফেইল করতাম তবে বাবা খুব বেশিই কষ্ট পেতেন। সেটা ভেবে আমি পাস মার্কটা তুললাম। রেজাল্ট হাতে পেয়ে বাবা মূর্ছা গেলেন। ভেবেছিলাম হয়তো মুক্তি মিলেছে। কিন্তু না! বাবার জেদের কারণে ডিইউর ফরম তুলতেই পারিনি। তার কারণেই পরেরবার আবারও বসতে হলো ভর্তি পরীক্ষায়। আবারও একই কান্ড ঘটিয়ে আমি বাসায় ফিরি। রেজাল্ট পেয়ে এবার আর বাবা মূর্ছা গেলেন না তবে আমাকে প্রাইভেটে ভর্তি করিয়ে দিলেন। ডিইউ স্বপ্ন ততদিনে আমার শেষ হয়ে গেছে। ভাবলাম অন্য কোথাও ট্রাই করি কিন্তু সেটাও হলো না। চারিদিকে যখন অন্ধকার ঘিরে ধরল তখন উপায়ন্তর না পেয়ে বাবার পথেই হাঁটলাম। ফার্স্ট ইয়ার আর সেকেন্ড ইয়ার খুব চেষ্টা করেছি। কিন্তু আর পারছি না স্যার। আমি কতদিন আঁকিনা! মেডিকেলের এসব আঁকিবুঁকির কথা বলছি না। আমি বলছি ফুলের কথা, আমি বলছি সেই দৃশ্যের কথা যা আমার কল্পনায় ভাসে কিন্তু তুলিতে উঠে আসেনা।'


মেয়েটির সেই অধরা স্বপ্নটা সেদিন আমাকে ছুঁয়ে গিয়েছিল। তার শেষ পরিণতি কি হয়েছিল জানার জন্য আমি ব্যাকুল ছিলাম। আমার সেই কলেজে শেষ ক্লাস যেদিন ছিল সেদিন মেয়েটির প্যারেন্টস্ ডাকা হয়েছিল। দীর্ঘদিনের অনিয়ম, বাজে রেজাল্টের জন্য আর রুলস্ অমান্য করার জন্য শুনেছিলাম তাকে ব'হি'ষ্কা'র করার কথা চিন্তা করা হচ্ছিল। সেখান থেকে ফিরে আমি আর সুযোগ পাইনি মেয়েটার সাথে দেখা করার। আমার ব্যস্ত জীবনে আমি আজ এখানে তো কাল ওখানে। কাজের চাপে আমি ভুলেই বসেছিলাম তার কথা। মনে পড়ত তখন যখন আমি স্বপ্নের কথা ভাবতাম, যখন কোনো আর্টিস্টের করা আর্ট দেখতাম তখনই মেয়েটাকে আমার মনে পড়ত। অন্যসময় একটুও মনে পড়ত না। একটুও না! আজ এতগুলো দিন পরে মেয়েটিকে দেখে আমি তাই অবাক হয়েছি, বিস্মিত হয়েছি, তব্দা খেয়েছি। কিন্তু এই মেয়েটি এখানে কেন এসেছে? সেই কি তবে শান্তি?


-'স্যার আমি কি বসতে পারি?'


মেয়েটির কথা শুনে আমার ধ্যান ভাঙল। আমি ল'জ্জিত হলাম এক দৃষ্টিতে হ্যাবলার মতো কোনো কথা না বলে তার দিকে অযথা তাকিয়ে থাকার জন্য। তাই উঠে দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি বললাম,


-'ওহ্ প্লিজ, টেইক অ্যা সিট!'


মেয়েটি বসল। আমিও আমার আসনে বসলাম। মেয়েটি কথা বলেনি কোনো। শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল। আমি সংশয়ে ছিলাম সে শান্তি কিনা! সেদিন এত প্রশ্ন করেছিলাম অথচ একবার জিজ্ঞেস করলাম না নাম কী তার! করলে আজ এত সংশয়ে পড়তে হতো না। অবেশেষ অপেক্ষার অবসান ঘটল। মেয়েটি তার রিনরিনে গলায় বলল,


-'আমি জানি আপনিও সারপ্রাইজড্ হয়েছেন। আসলে এমনটা হওয়ারই ছিল। সত্যি বলতে আমিও হয়েছি।'


আমি একটু আধটু শিওর হলাম এই মেয়েটিই শান্তি। সে আবারও বলল,


-'আসলে বাবা বলল আপনার সাথে যেন দেখা করি। আপনি তো ব্যস্ত থাকেন, তাই হসপিটাল ছাড়া আর অন্য কোথাও বসে কথা বলার, দেখা করার সুযোগ পাওয়ার কথা না।'


আচ্ছা, মেয়েটিই শান্তি। আমি বললাম,


-'আমাকে বললে আমি সময় বের করে নিতাম শান্তি।'


মেয়েটি আমার কথা শুনে চমকে উঠল যেন। আমি নিজেও চমকে গেলাম নিজের কথার ধরণে। আসলেই এটা আমি বলেছি? ভাবতেই পারছি না! কিন্তু কিছু করার নেই। বলে ফেলেছি। ট্যাকল দিতে হবে এখন। শান্তিকে দেখলাম মুখটা দুঃখীত করে বলছে,


-'আমি আসলে এভাবে আসতে চাইনি। আপনি বিজি থাকবেন এটা আমি জানতাম। বাবা বললেন তাই আসলে মানা করতে পারিনি। সো স্যরি স্যার।'


আহা! স্যার বলছে কেন? আমাদের সম্পর্ক কি শিক্ষক ছাত্রীর? মেয়েটির কলেজে আমি মাত্র দুই মাস ছিলাম গেস্ট টিচার হিসেবে। তার ওপর সে তো আমার ক্লাসই করত না। স্টুডেন্ট হয়ে গেল ওমনি? হুহ!


-'ইটস্ ওকে। আমি তোমার অসুবিধার কথা ভাবছি। তুমি চাইলে আমরা কোথাও বসতে পারি। আমি ফ্রী আছি এখন।'


-'না স্যার। আমার সমস্যা নেই।'


আমার তো সবকিছুতেই শুরু থেকে সমস্যা। এই যেমন বিয়ে করতেই চাইনি। দেখা করতেও চাইনি। এখন ফার্স্ট ডেইট এট হসপিটালেও আমি রাজি নই। অথচ আমি দেখা করতেই চাইনি। আমি নিজেই এখন নিজের কাজে আশ্চর্য হচ্ছি। আমার মনটা খুব উৎফ্রুল্ল হয়ে আছে সত্যি বলতে। মেয়েটির দেখা পেয়ে আমি আনন্দিত হয়েছি খুব। 


-'হসপিটালে তোমাকে প্রোপার্লি ট্রিট করতে পারব না শান্তি। বাহিরে কোথাও বসি, লাঞ্চ করতে করতে কথা বলা যাবে।'


-'স্যার একচুয়েলী আমার ক্লাস আছে। আমি জাস্ট টুয়েন্টি মিনিটস্ এর মতো ফ্রী আছি। চা বা কফি হলেই হবে আমার। হসপিটালে এই দুটোর একটা নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে!'


আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ছিলাম রীতিমত। তার সব গুলো কথাই কোথায় যেন হি'ট করছিল বারবার। আমি তাড়াতাড়ি পিয়নকে ডেকে কফির জন্য বলতে নিলেই শান্তি বলল,


-'রং চা হবে লেবু দিয়ে?'


পিয়ন বলল,


-'হবে।'


শান্তি হেসে মাথা নেড়ে বলল,


-'তবে আমার জন্য লেবু চা দিবেন প্লিজ।'


পিয়ন যেতেই শান্তিকে বললাম,


-'তো! এখন কোন ইয়ারে?'


প্রশ্নটা করেই নিজের ভুল বুঝতে পারলাম। কোন ইয়ারে সেটা তো আমার জানার কথা। হিসেব করলেই তো বোঝা যায়। ধুর! শুধু শুধু এটা জিজ্ঞেস করে নিজের বোকামির প্রমাণ দিলাম। শান্তি বোধ হয় কিছু মনে করেনি। সে বেশ হাসি মুখ করেই জানালো,


-'ফোর্থ ইয়ারে।'


আমি একটু সংকোচ করে বললাম,


-'যদি কিছু মনে না করো একটা প্রশ্ন করতে চাই। আসলে আমার লাস্ট ক্লাসের দিন তোমার প্যারেন্টস্ কল করা হয়েছিল। আর তারপরে!'


শান্তি এক ঝাঁক হেসে বলল,


-'সেদিন বাবার ক্ষ'ম'তার জো'রে আমাকে বহি'ষ্কা'র করা হয়নি স্যার। আমিও আর জেদ করিনি। বাবার দুটো চ'ড়েই আমি শুধরে গেছি। এখন ঠিক হয়ে গেছি।'


আমার কেন যেন খুব ক'ষ্ট হলো। বললাম,


-'তোমার স্বপ্ন? আর্ট?'


শান্তির মুখটা মলিন হয়ে উঠল। তবুও সে মৃদু হেসে জানালো,


-'আগে আর্টের জন্য ব্যাকুল ছিলাম কারণ মনের ক্যানভাসে দৃশ্য তৈরি হতো। মনের আঙিনায় শত ফুল ফুঁটত, ফুলের সুবাস পেতাম। এখন আর মনের ক্যানভাসে দৃশ্য ওঠে না। কোনো ফুলই ফুঁটে না, ফুলের সুবাস পাইনা। তাই এখন আর আর্টের কথাও ভাবি না।'


আমি চুপ হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে। চা এলো। শান্তি শান্তিতে চায়ে চুমুক দিলো। আমি পারলাম না কফিতে গলা ভেজাতে। এই মেয়েটির স্বপ্নটা অধরা রয়ে যাচ্ছে বলে আমার ক'ষ্ট হচ্ছে। শান্তির মাঝে যেন নিজেকে খুঁজে পেলাম। আর এটাও অনুধাবন করলাম, এখনও সবটা শেষ হয়ে যায়নি। সময় আছে। এখনও সময় আছে। ফুল ফুঁটতে পারে, এই যেমন একটু আগে আমার মনে বসন্তের ফুল ফুঁটল। যেটা আর কখনোই ফোঁটার ছিল না! তেমনিই শান্তিরও মনের ক্যানভাসে হয়তো দৃশ্য গড়ে উঠবে। শত নয় সহস্র ফুল ফুঁটবে। চারিদিকে ফুলের সৌরভে মৌ মৌ করবে। 


চা শেষ করে উঠতেই শান্তি বলল,


-'আসি স্যার। সময়টা ভালো ছিল।'


আমি তাড়াতাড়ি ভুলটা শুধরে দিয়ে বললাম,


-'স্যার নয়, নাভিদ। উড বি হাজব্যান্ডকে স্যার কে ডাকে?'


শান্তিকে দেখলাম বিস্ময়ে জমে গিয়ে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। না, ভালো তো! আমার দিকে তাকানোই তো দরকার তার। আমার এই সৌম্যদর্শন মুখটা দেখলে নিশ্চয়ই সে ক্যানভাসে আঁকার জন্য সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যটা খুঁজে পাবে।

চলবে....
(পার্ট-1)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন