ভয়ংকর ভুতের গল্প (অভিশপ্ত পুরো গ্রাম (পর্ব - ৩) )
পর্ব ৩
পরদিন গভীর রাতে লন্ঠণ হাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো হাসান । চাঁদটা আজ ভালোই আলো দিচ্ছে । চারিদিকে সুনশান নীরবতা ।
শুধু মাঝে মাঝে পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে । আকাবাঁকা মাটির রাস্তা ধরে হাটঁছে ও । কিছুক্ষণপর জঙ্গলের কাছে এসে পৌঁছালো । চিকন সরু একটা রাস্তা জঙ্গলের ভিতর ঢুকে গেছে।
বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে হাসান জঙ্গলের পথে হাঁটা শুরু করলো । হঠাৎ মনে হল কে যেন ওর পিছনে হাটঁছে । স্পষ্ট পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে । ও পিছনে ফিরে তাকালো না ।
মনে সাহস রেখে ও হাটঁতে লাগলো । হঠাৎ ও দেখলো একদল কালো বিড়াল ওর দিকে তেড়ে আসছে । অন্ধকারেও বিড়ালগুলোর চোখ লাল টকটকে দেখা যাচ্ছে । ও থমকে দাড়াঁলো । কিন্তু বিচলিত হল না ।
কারণ ও জানে সাহস হারালে ওর মৃত্যু অনিবার্য । ওর কাছাকাছি আসতেই বিড়ালগুলো হঠাৎই উধাও হয়ে গেল । ও আবার হাটঁতে শুরু করলো । পুরাতন জমিদার বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো ।
অনেক বছরের পুরানো এই জমিদার বাড়ি ।
ছাদ ভেঙ্গে গেছে অনেক আগেই। অনেক জায়গায় দেয়াল ধসে পড়ছে। ঘরে ঢুকে মনে হল এখানকার পরিবেশ বাইরের থেকে আলাদা। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে।
আর মনে হচ্ছে যেন কয়েক জোড়া চোখ ওর দিকে সবসময় নজর রাখছে । হাসান গপ্তঘরটা খুজঁতে লাগলো । তখনই হঠাৎ আলো জ্বলে উঠলো বাড়িতে । মানুষজনে ভরে গেল বাড়িটা । কেউ গল্পে মত্ত ; কেউ বা খাচ্ছে ; কিছু তরুণী মেঝেতে আলপনা আঁকছে ।
এসব দেখে হাসান খুব অবাক হল । যদিও ও জানেই যে এমন অদ্ভুত সব ঘটনার সম্মুখীন ওকে হতে হবে ।
তবে এতকিছুর মাঝেও মনে সাহস রাখতে হবে । নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে । ও গুপ্তঘরটা খুজঁতে লাগলো । পশ্চিম দিকের কক্ষে ঢুকতেই আবারও বাড়িটা অন্ধকার হয়ে গেল । বাতাসর শোঁ শোঁ শব্দ । মনে হচ্ছে যেন বাহিরে বজ্রপাত হচ্ছে ।
বাতাসে ভয়ংকর কিছুর গড় গড় শব্দ ভেসে আসছে । হাসান সেদিকে তোয়াক্কা না করে লন্ঠন হাতে রুমের ভিতর ঢুকলো ।
এক কোণে নিচে যাওয়ার একটা সিড়িঁ দেখা গেল । হাসান সিড়িঁ বেয়ে নিচে নামলো । মাকড়সার জালে ভরপুর রুমটা । ওর চোখ, মুখ , শরীর মাকরসার জালে ভরে গেল । এদিকে বাতাসে একটানা গড় গড় শব্দ ভেসেই আসছে । ওকে যেন কেউ ভয়ংকর কন্ঠে হুমকি দিচ্ছে । হাসান লন্ঠনটা উঁচু করে ধরে চারদিকে তাকিয়ে দেখলো বইটা ভাঙ্গা একটা টেবিলের উপর পড়ে আছে । দ্রুত বইটা হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো ।
আমি যখন বাসা থেকে বের হচ্ছি, হঠাৎ একজন আমাকে ডেকে বলল,
এই হাসান
এত রাতে এখানে কি করছিস ?"
হাসান কন্ঠটা শুনে চমকে গেল । এটা যে ওর দাদুর কন্ঠ । ও পিছনে তাকাতে যাবে এমন সময় ওর মনে পড়লো ওর দাদু তো মারা গেছে । এখানে আসবে কি করে !! এছাড়া কবিরাজের সতর্কবাণীও মনে পড়লো ওর । ও পিছনে না তাকিয়ে সোজা হাটঁতে লাগলো । পিছন থেকে তখনও কে যেন ফিসফিস করে ডাকছে,"
হাসান !! হাসান !!" “তখনও দমকা হাওয়া বইছে। মনে হচ্ছে বনে বজ্রপাত হচ্ছে। কেউ চায় না হাসান এখান থেকে বই নিয়ে চলে যাক!!! হাসান বইটা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলো । পরদিন সকালে ওর বাড়ির উঠানে জমায়েত হল গ্রামবাসীরা ।
হাসান ওদের সবার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলো "কাল রাতে জমিদার বাড়ি থেকে যে বইটা এনেছি সেটা পড়েছি আমি ।
বই পড়ে জানলাম অনেক অদ্ভুত আর ভয়ংকর কিছু ঘটনা । বহু বছর আগে ঐ পুরাতন জমিদার বাড়িতে থাকতেন একজন প্রতাপশালী জমিদার । একবার খাজনা আদায়ের ব্যাপার নিয়ে তিনি একজন নির্দোষ চাষীকে মৃত্যুদন্ড দেন । মৃত্যুর আগে চাষীটা কেঁদে কেঁদে বলেছিল," আমি নির্দোষ । আমাকে বিনা অপরাধে মারা হচ্ছে । আমি অভিশাপ দিলাম খুব শীঘ্রই এই জমিদার বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে ।
এই গ্রামের পরবর্তী প্রজন্মও শান্তিতে থাকতে পারবে না ।" জমিদার ওর কথা গ্রাহ্য না করে প্রাণদন্ড দিয়ে দেন । পরিবার বলতে ঐ চাষীর শুধু একটা কালো বিড়াল ছিল ।
মৃত্যুর পর চাষীর কবরের কাছে সারারাত বসে ছিল বিড়ালটা..............
চলবে.....
লেখনিতে : নাজমুল হাছান রবিন