ভয়ংকর ভুতের গল্প (অভিশপ্ত পুরো গ্রাম (পর্ব - ১) )
পর্ব - ১
জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিক । প্রচন্ড গরম পড়েছে । কোথাও একটু বাতাস নেই । গাছের পাতাগুলোও নড়ছে না ।
খেলা শেষে হাসান যখন বাড়ি ফিরলো তখন সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে এসেছে । বাড়ি ফিরতেই হাসানের দাদু চেচিঁয়ে বলল,"কিরে গরুগুলো ক্ষেত থেকে এনেছিস ? "ভুলেই গিয়েছিলাম দাদু ।
এখনই যাচ্ছি , বলে দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল হাসান ।
হাসান আর ওর দাদু মিলে ছোট সংসার ওদের । ছোটবেলাতে মা বাবাকে হারায় । তারপর থেকে দাদুর সাথেই থাকে ও । হাসানের কথা শুনে দাদা মুচকি হেসে বললেন, পাগল ছেলে। সব অন্ধকার হয়ে গেল। একটি কালো বিড়াল উঠোনে বসে মিউ মিউ করছে।
হাসানের দাদু হ্যারিকেন জ্বালিয়ে লাঠি দিয়ে তাড়া করলো বিড়ালটাকে । একটু দূরে গিয়ে কালো বিড়ালটা ফকফকে সাদা বিড়ালে রূপান্তরিত হয়ে গেল । খুব অবাক হল হাসানের দাদু । সাত পাঁচ না ভেবেই বিড়ালটার পিছনে ছুটলেন তিনি ।
বিড়ালটা দৌঁড়ে বাঁশঝাড়ের দিকে চলে গেল । মোট ছয়টা বাঁশঝাড় একসাথে এখানে । বিড়ালটার প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণে তিনি বিড়ালটার সাথে বাঁশঝাড় গুলোর মাঝখানে চলে আসলেন ।
বিড়ালটা স্থির হয়ে দাড়িঁয়ে গেল । এতক্ষণে যেন বোধ ফিরে আসলো হাসানের দাদুর । কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে । ধীরে ধীরে সাদা বিড়াল কালো আর কুৎসিত আর ভয়ংকর রূপ ধারণ করলো । পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠলো ভয়ংকর চেহারাতে ।
তীক্ষ্ন দাঁত বেয়ে লালা ঝরতে লাগলো । ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো হাসানের দাদু । কিন্তু একটুও শব্দ বের হল না । প্রাণীটা দুই হাতে গলা চেপে ধরলো তার । এদিকে হাসান গরু নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে দেখলো ওর দাদু সাদা কাপড় পড়ে উঠানে বসে আছি । একটু অবাক হয়ে হাসান জিজ্ঞাসা করলো,"এই রাতের বেলা সাদা কাপড় পড়ে বসে আছো কেন দাদু ? "আমি আমার বোনের বাড়িতে যাবো", বলেই হাটঁতে শুরু করলেন তিনি ।
একটুপর আবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে অদ্ভুত ভারী কন্ঠে বললেন,"কালো বিড়াল থেকে সাবধানে থাকিস !!" জিতু ঘাড় নাড়লো । ওর দাদু চলে গেল । হাসান ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে ভাবলো দাদু কালো বিড়ালের কথা কেন বলল !! রাত গভীর হল ।
হাসান গভীর ঘুমে হারিয়ে গেল । পরদিন সকালে চিৎকার চেচাঁমিচি শুনে ঘুম ভাঙ্গলো হাসানের । ঘুম থেকে উঠে বাহিরে এসে দেখলো ওর দাদুর মৃতদেহ পড়ে আছে উঠানে । আর তার চারপাশে গ্রামের মানুষজন জড়ো হয়ে আছে ।
হাসান কিছুই বুঝতে পারলো না । রনি দৌঁড়ে এসে বলল,"সকালে বাঁশঝাড়ের দিকে গিয়ে দেখি তোর দাদুর লাশ পড়ে আছে । গলায় আঙ্গুলের লাল লাল ছাপ ।" হাসান কিছু বলল না ; বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লো । ওর চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো ।
দুপুরের আগেই দাফন কাফন সম্পন্ন করা হল ওর দাদুর । বটগাছের গোড়ায় বসে কান্না করছে হাসান ।
ও কিছুতেই ভাবতে পারছে না ওর দাদু নেই । আর সবচেয়ে বেশি যেটা ভাবছে সেটা হল ওর দাদু মারা গেল কি করে সেটাই মাথায় ঢুকছে না । ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু দাদুর শেষ কথাটা - কালো বিড়াল থেকে সাবধানে থাকিস!!
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হল । আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো গ্রামে । রনি মাছ ধরে বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো । হঠাৎ ও শুনতে পেল কে যেন বাঁশঝাড়ের ভিতর থেকে করুণ কন্ঠে বাঁশি বাজাচ্ছে । একটু অবাক হল ও । এই সাঝেঁর বেলায় কে বাঁশি বাজাচ্ছে এখানে !! বাঁশঝাড়ের ভিতর ঢুকলো ও । তখনই শোঁ শোঁ বাতাস বইতে লাগলো ।
প্রচন্ড বাতাসে বাঁশ গুলো একটা আর একটার সাথে জোরশব্দে সংঘর্ষিত হতে লাগলো । হঠাৎ ও দেখলো বাঁশঝাড়ের একপাশে লাল টকটকে দুটো চোখ দেখা যাচ্ছে । ও ছুটে পালাতে চাইলো ।
কিন্তু এক পাও নড়তে পারলো না । আরো স্পষ্ট হতে লাগলো চোখ দুটো । একটু পরই হিংস্র আর বিকৃত চেহারার কেউ একজন ওর সামনে এসে দাড়াঁলো । ভয়ে ওর গায়ের সব লোম দাড়িঁয়ে গেল ।
ওর চিৎকার করতে চাইছে , ছুটে পালাতে চাইছে কিন্তু কিছুই পারছে না । অদ্ভুত কোন শক্তি যেন ওকে আটকে রাখছে । পরদিন সকালে রতনের লাশ পাওয়া গেল বাঁশঝাড়ে । ওর গলাতেও ছিল লাল লাল আঙ্গুলের ছাপ!
চলবে........
লেখনিতে : নাজমুল হাছান রবিন