বাহারি ফলের বাহারি স্বাস্থ্য উপকারী গুণাবলী
🍉তরমুজের যত উপকারিতা🍉
তরমুজ একটি মিষ্টি এবং রসালো ফল যাতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এই ফলটি শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই পছন্দ করে।
এ ব্যাপারে ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হসপিটালের পুষ্টিবিদ ফাহমিদা হাশেম জানিয়েছেন, তরমুজের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা।
তিনি বলেন, তরমুজে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে। এছাড়া এতে থাকে অনেকগুলো খনিজ উপাদান। এর মধ্যে অন্যতম উপাদান হচ্ছে আয়রন। আয়রন রক্ত এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায্য করে। সুতরাং রক্তাল্পতা বা রক্তে হিমোগ্লোবিনের কম মাত্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই ফলটি উপকারী।
রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন এমন সবার জন্য এই ফল সহায়ক হতে পারে বলে জানান এই পুষ্টিবিদ।
তিনি বলেন, তরমুজে আছে যথেষ্ট ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে এবং মজবুত করতে সহায়তা করে। বিশেষত বয়ষ্ক মানুষের জন্য এটি হতে পারে খুব ভালো খাবার।
ফাহমিদা হাশেম বলেন, তরমুজে সবচেয়ে বেশি থাকে ভিটামিন ‘সি’। ভিটামিন ‘সি’ এমন একিটি উপাদান যা প্রতিদিনই শরীরের জন্য প্রয়োজন হয়। কারণ প্রশ্রাবের সঙ্গে প্রতিদিনিই ভিটামিন ‘সি’ বের হয়ে য়ায়। এজন্য তরমুজ হতে পারে প্রতিদিনের খাবারে একটি উপযোগী ফল।
এছাড়া তরমুজে থাকে ভিটামিন ‘এ’। যে ফলে রঙের প্রাধন্য বেশি থাকে তাতে ভিটামিন ‘এ’ থাকে। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি তৈরি বা গঠনে সহায়তা করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে বলে জানান তিনি।
এই পুষ্টিবিদ বলেন, গরমে প্রচুর পরিমাণ পানি শরীর থেকে বের হয়ে যায়।দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়ার কারণে যে পানিস্বল্পতা তৈরি হচ্ছে তার পূরণে তরমুজ বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের মতো একাধিক অসুস্থতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের প্রতিদিন অনেক ওষুধ খেতে হয়। ফলে মূত্রনালীর সংক্রমণ বাড়ছে। এমন রোগী যদি রোজা ভাঙ্গার জন্য তরমুজ রাখেন, তাহলে এই সমস্যা অনেক কম হতে পারে।
এছাড়া যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য তরমুজ অনেক উপকারি হতে পারে বলে জানান এই পুষ্টিবিদ।
অবশ্য অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে তরমুজ বেশি খাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে অল্প পারিমাণ খেতে পারবে।
তরমুজে পটাশিয়াম থাকে। ফলে যাদের সিভিয়ার বা মধ্যম মানে কিডনি সমস্যা আছে তাদের তরমুজ এড়িয়ে চলাই ভালো।
এছাড়া তরমুজ খাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুল হলো একসঙ্গে বেশি পরিমাণে খাওয়া। এতে ওভার হাইড্রেশন হয় এবং অনেক সময় কিডনিতে পানি জমা হতে পারে। পানি শরীর থেকে বের হতে না পারলে কিডনির ওপর এক ধরনের চাপ পড়তে পারে।
🎀কিসমিসের উপকারীতা🎀
আঙ্গুর রোদে শোকানো হলে সেটাই কিসমিস হয়। সাধারণত বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়। অনেকেরই হয়তো জানা নেই, কিসমিস একটি স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন খাবার। এমনকী কিসমিস ভেজানো পানিও শরীরের পক্ষে বিশেষ উপকারী।
উপকারীতা :-
🍇-কিসমিস পাকস্থলীর জন্য ভালো। এটা সহজেই হজম হয় এবং শরীরে থাকা ব্যাটরিয়াকে দমন করতে সাহায্য করে।
🍇-কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে যা হজমশক্তি বাড়ায়। এ কারণে এটি কোষ্টকাঠিন্য কিংবা ডায়রিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে দারুন সহায়ক।
🍇-কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ,ভিটামিন সি থাকে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সংক্রমণ সারাতে সহায়তা করে।
🍇-কিসমিস ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। যা হাড় সুরক্ষায় সহায়তা করে।
🍇-ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় কিসমি।খাদ্যতালিকায় যদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার থাকে তাহলে তা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শুধু ক্যান্সারের সেলই ধ্বংস করে না বরং নানা ভাবে ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
🍇-আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি'র তথ্য অনুসারে, কিসমিস রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে।
🍇-এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কোলেস্টেরলর কমাতেও সাহায্য করে কিসমিস।
🍇-প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকায় কিসমিস শক্তি উৎপাদনেরও ভালো উৎস।
🍇-ঠান্ডা, কাশি কিংবা জ্বর সারাতেও কিসমিস বেশ কার্যকরী।
🍇-গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে,কিসমিস ভেজানো পানি খেলে শরীরে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। যার ফলে রক্ত পরিশোধিত হতে শুরু করে।
🍇- এটি পেট পরিষ্কার রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
🍇-এছাড়া এটি শরীরে সারাদিনের শক্তি জোগাতেও সাহায্য করে।
🍇- কিসমিস ভেজানো পানি লিভার ও কিডনির জন্যও বেশ উপকারী। এর জন্য দুই কাপ পরিমাণ পানিতে ১৫০ গ্রাম কিসমিস সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে কিসমিস ছেঁকে, জল সামান্য গরম করে খালি পেটে খান। উপকার পেতে সপ্তাহে চার দিন এটি খান।
এছাড়াও কিসমিসের আরো উপকারীতা রয়েছে।
সাদা লংগান ফলের উপকারিতা
সাদা লংগান ফল বিভিন্ন ওষুধেও ব্যবহৃত হয়। এই ফলটি সুস্থ ত্বক এবং একটি উজ্জীবিত মন ও শরীরের জন্য আদর্শ। এই ফলটি পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা সমর্থন করে।
সাদা লংগান ফলে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আর এগুলো ত্বকের ক্ষয়রোধে বাধা প্রদান করে থাকে। এটি ত্বককে উজ্জল, ত্বকের পুষ্টি, চুলকানি ও বার্ধক্যজনীত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
সাদা লংগান ফলে রয়েছে প্রচুর আয়রন। যা শরীরের ক্লান্তি দুর করতে সহায়তা করে। এই ফলটি সেবনের ফলে শরীরে শক্তি সরবরাহিত হয়, ফলে ক্লান্তি ভাব কেটে যায়।
এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস বিদ্যমান। এটি শরীরের বিভিন্ন হাড়, পেশী ও জয়েন্টের ব্যথা দুর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। লংগান ফলের বীজের গুড়া পাউডার ফুলে যাওয়া, ক্ষত, পাকা ক্ষত এই রোগগুলির মহোঔষধ। বীজটি মূত্রনালীর বিভিন্ন ধরণের সমস্যাও সমাধান করে থাকে।
সাদা লংগান চীন দেশে বিভিন্ন মেডিসিনে হজম, ব্যথা, জ্বর এবং সাপের বিষের প্রতিষেধক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফল, বীজ ও ফুল বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসেবে ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সাদা লংগান বীজের গুড়া ফোলাভাব, রক্তপাত, একজিমা ও ব্যথার পথ্য হিসেবেও ব্যহহৃত হয়ে থাকে।
সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন। ধন্যবাদ।