ভয়ংকর ভুতের গল্প (অভিশপ্ত পুরো গ্রাম ( শেষ পর্ব) )
শেষ পর্ব
পরদিন সকালে ঐ বিড়ালটাকে মৃত অবস্থায় চাষীর কবরের পাশে পাওয়া যায় । লোকজন বিড়ালটা বস্তায় ভরে এই বাঁশঝাড়ের এখানে ফেলে দিয়ে যায় । তারপর থেকেই শুরু হয় ভয়ংকর সব কান্ড । একরাতে একদল কালো বিড়াল দেখা যায় জমিদার বাড়ির আঙ্গিনায় । ঐ রাতেই মারা যায় জমিদার । তার কক্ষেই পাওয়া যায় মৃতদেহ ।
চোখ উপরানো আর চেহারাটাও বিকৃত হয়ে গিয়েছিল তার । জমিদারের এত ভয়ংকর মৃত্যু দেখে জমিদারের পরিবার ভয়ে এই গ্রাম ছেড়ে চলে যায় । সেই চাষী আর তার কালো বিড়ালের অতৃপ্ত আত্মাই এই গ্রামে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে এখন ।
ওরা এই গ্রামকে শশ্মান না করে যাবে না । তবে ঐ বইতে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় বলা আছে ।" - কি উপায় ? একজন জিজ্ঞাসা করলো । - সেটা বলা যাবে না । বললে আর কাজ হবে না । তবে কাল থেকে এই গ্রাম অভিশাপমুক্ত হয়ে যাবে । আজ রাতেই আমি সব কাজ সম্পন্ন করে ফেলবো । আপনাদের শুধু একটা কাজ করতে হবে ।
- কি কাজ করতে হবে ?
- কয়েক মণ দুধ সংগ্রহ করে বাঁশঝাড়ের মাঝখানে গর্ত করে ঢালতে হবে । কালো বিড়ালটা নাকি খুব দুধ পছন্দ করতো ।
তাই ওকে তুষ্ট করার জন্য এটা করতেই হবে । মুহূর্তের মধ্যেই কাজে লেগে পড়লো সবাই । বিকালের মধ্যেই দুধ সংগ্রহ করা হয়ে গেল । তারপর বড় একটা গর্ত করে তাতে দুধ ঢালা হল । বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হল । আস্তে আস্তে অন্ধকার নেমে আসলো চারদিকে । রাত গভীর হল । চাঁদটা আজ মেঘে ঢেকে আছে । হাসান বাড়ি থেকে বেরিয়ে বনের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে। একটু এগিয়ে গিয়ে নিজের বাড়ির দিকে তাকাল।
ও দেখলো ওর দাদু সাদা কাপড় পড়ে দরজার সামনে হাসিমুখে দাড়িঁয়ে আছে । ওর দিকে হাত নাড়িয়ে বলল." তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস হাসান ।" হাসান চোখের পানি মুছে আবারও হাটঁতে লাগলো । কিছুক্ষণের মধ্যেই জঙ্গলে এসে পৌঁছালো ও ।
জঙ্গলের সরু পথ ধরে হাটঁতে লাগলো । সে একটা সরু বনের পথ ধরে হেঁটে গেল। তাকে দেখে মনে হলো তার পিছনে হাজারো কণ্ঠ ফিসফিস করে তাকে না যেতে বলছে। কিন্তু সে জানে তার যাওয়ার সময় হয়েছে। একবারও পিছনে ফিরে না তাকিয়ে ও সোজা জমিদার বাড়ির দিকে হাটঁতে লাগলো । বাড়ির পিছনেই জমিদারের পুরানো কারাদণ্ডের মঞ্চ । এখানেই নির্দোষ চাষীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল ।
হাসান ওটার পাশে গিয়ে দাড়াঁলো । তখনই খুব জোরে বাতাস বইতে লাগলো জঙ্গলে । আগের মতই ভয়ংকর গড় গড় শব্দ ভেসে আসছে বাতাসে আর সাথে বুক কাপাঁনো বিড়ালের ডাক ।
হঠাৎ কারো কান্নার কন্ঠ শোনা গেল । কেদেঁ কেঁদে কে যেন বলছে,"বিশ্বাস করেন বাবু , আমি নির্দোষ । আমাকে ছেড়ে দিন ।" বাতাসে বার বার ভেসে আসতে লাগলো এই কথা গুলো । জিতু ধীরে পায়ে এগিয়ে গেল মঞ্চের দিকে । মঞ্চে মোটা লোহার দন্ডে ঝুলছে দড়ি দিয়ে ।
হাসান তাকালো দড়িটার দিকে । তখনই কারা যেন পিছন থেকে ডাক দিল- হাসান । ও পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো ও দাদু , রানা, রনি হাসিমুখে দাড়িঁয়ে আছে ।
হাসান ওদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো । ওরা একসাথে বলল," তোমাকে এই গ্রাম , গ্রামের মানুষ কখনও ভুলবে না ।"
পরদিন সকাল
গ্রামের সবাই হাসানের বাড়ির সামনে এসে দেখলো দরজায় তালা ঝুলছে । খুব অবাক হল সবাই । নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি করতে লাগলো ওরা । তখন সেই কবিরাজ এসে ওদের সামনে দাড়াঁলো । - আপনারা হাসানকে খুজঁছেন তো ? -
হ্যা ,
ও আর আসবে না । - আসবে না!! প্রায় সমস্বরে বলল সবাই ।
- না , আসবে না ""
এই গ্রামকে ভয়ংকর আত্মার কবল থেকে বাচাঁনোর জন্য ও নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছে । বইতে লেখা ছিল কোন নির্দোষ মানুষ যদি মধ্যরাতে জমিদারের গলায় দড়ি দেওয়ার মঞ্চে গিয়ে ঐ চাষীর মত মৃত্যুবরণ করে তাহলেই এই গ্রাম সমস্ত বিপদ থকে মুক্ত হবে ; নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ঐ অভিশপ্ত আত্মা ।
কবিরাজের কথা শেষ হওয়ার আগেই গ্রামবাসী সবাই ছুটে গেল জমিদার বাড়িতে । গিয়ে দেখলো হাসানের লাশ ঝুলছে দড়িতে ।
চোখ খোলা ; মুখে স্পষ্ট হাসির চিহ্ন । হাসানের লাশ দেখে উপস্থিত সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো । কয়েক বছর পরের কথা ।
এই গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় "হাসান পুর গ্রাম"।
একদিন অনেক দূর থেকে আসা একজন পথিক গ্রামের মোড়লকে জিজ্ঞাসা করলো,"হাসান তো মানুষের নাম ; এই গ্রামের নাম হাসানপুর গ্রাম কেন ?" মোড়ল অশ্রুসজল চোখে উত্তর দিল,"এই গ্রামে একজন সাহসী হাসান ছিল । যে আমাদের জন্য , এই গ্রামের জন্য নিজের জীবন দিয়েছে । এই গ্রামকে নিয়ে গর্ব করার মত ঐ একটাই জিনিস আছে আমাদের "নাজমুল হাছান রবিন "
সমাপ্ত