ভয়ংকর ভুতের গল্প (ভয়ংকর হাভেলি (শেষ পর্ব) )

ভয়ংকর ভুতের গল্প (ভয়ংকর হাভেলি (শেষ পর্ব) )



অন্তিম পর্ব,,, তাসলিমা কে নিয়ে আমান আর আব্দুল্লাহ লুকিয়ে আছে একটা কক্ষে। আমান খাটের নিচে লুকিয়েছে আর আব্দুল্লাহ তাসলিমাকে নিয়ে আলমিরার ভেতর।। তাসলিমা এখনো অজ্ঞান পরে আছে,, আব্দুল্লাহ ধিরে ধিরে ডাকে তাসু এই তাসু উঠো প্লিজ।। তাসলিমার কোনো সাড়া নেই। এদিকে আমান আল্লাহ আল্লাহ করছে খাটের নিচে শুয়ে।। হয়েছে কি তখন তাসলিমা অজ্ঞান হওয়ার পর,, ফিরে যাবো তখনকার দৃশ্যে... পেত্নীর এমন ভয়ংকর রুপ দেখে তাসলিমা সেখানেই সেন্সলেস হয়ে পরে যায়। নুরি পৈচাশিক হাসি দিয়ে বলে শিকার খুদ মেরে পাস আ গায়ি,,।। আমান বলে আভি মাজা আয়েগা না ভিরু...!! আব্দুল্লাহ বলে চুপ কার কা* মি* নে,, মুসিবাত সে বাঁচনে কি তারিখা বাতা।। নুরি ভয়ানক কণ্ঠে বলে ;; কেউ বাঁচবি না, তোদের আজ আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা হা হা হা,, তোদের জম তোদের এই হাভেলিতে নিয়ে এসেছে এখন মর বলেই হাত বাড়িয়ে তাদের ছুতে নিলে,,,।। আব্দুল্লাহ তাসলিমাকে কোলে নিয়ে উল্টো দৌড় লাগায়। আব্দুল্লাহ দৌড়ের ওপরে থাকায় খেয়াল করেনি তার ধাক্কা খেয়ে আমান গিয়ে পরে নুরির সামনে। আমান ভয়ে থরথর করে কাঁপছে,, তাসলিমা ভয়ানক কণ্ঠে বলে তাহলে তুই আগে মর বলেই আমানকে ধরে একটা আছাড় দেয়। "আমানের দেয়াল পিঠে ঠেকে গেছে ,, তাই সেও কুস্তি শুরু করে দেয় নুরির সাথে।" কিন্তু নুরির সাথে সাধারণ মানুষের পেরে উঠার কথা না। তবুও আমান হার মানছে না। নুরির চুলের মুঠি ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমান নিজে গিয়ে ঠাস করে সিড়ির নিচে পরে,, উপর থেকে নিচে পরায় হাতে ব্যথা পায়।। নুরি মাথায় মালিশ করতে করতে নিচে নামে,, তারপর বলে শুটকির বাচ্চা তুই আমার চুল ধরে টেনেছিস আজ তোকে মেরে আমি তোর জুস বানিয়ে খাবো।। নুরি এক পা একপা করে খুড়িয়ে খুড়িয়ে আমানের দিকে এগুতে থাকে।। আমান পিছলিয়ে পিছলিয়ে পেছনে যেতে থাকে।। আবারও আমানের পিঠে দেয়াল ঠেকে যায়,,।। নুরি খিকখিক করে হেসে বলে শুটকির বাচ্চা আজ তোকে কে বাঁচাবে আমার হাত থেকে,,।। আমান বলে ছোড় দো মাম্মি,, মেরি হনে বালি বাচ্ছে কি আম্মা কি কাসাম কাভি ইস হাভেলি পে নেহি আগেয়া মে!! নুরি আরও কয়েক পা এগিয়ে এসে আমানের চুলের মুঠি ধরে টান দিয়ে ধরে আমান গলা ফাটা চিতকার দিয়ে বলে ছোড় ভুত্নী ছোড় বাচ্চে কি জান লেগি কিয়া?? নুরি হিশহিশিয়ে বলে হিসাব বরাবর হলো।। তুই আমার চুল টেনেছিস আমিও টেনে দিলাম।। আমান ধাক্কা দিয়ে নুরির হাত থেকে ছুটে দৌড় লাগায়,, নুরিও পেছন পেছন দৌড় শুরু করে। আমান গিয়ে একটা কক্ষের খাটের নিচে শুয়ে পরে,,। সেই কক্ষেই আগে থেকে আব্দুল্লাহ আর তাসলিমা আলমিরার ভেতর লুকিয়ে ছিলো।। আমানের এমন দৌড়ের শব্দ শুনে আব্দুল্লাহর বুকে ছ্যাঁত করে উঠে,,, সে ভাবে ভুত্নীটা নিশ্চিত এই রুমে এসে গেছে কোনো রকমে দম আটকে বসে থাকে সে। দৃশ্য ফিরে আসে বর্তমানে... কক্ষের ভেতর কয়েক জোরা পায়ের শব্দ শুনতে পায় আমান,, আব্দুল্লাহ,, তাসলিমা তখনও অজ্ঞান।। আমান খাটের তলা দিয়ে দেখে চারটে পুরুষের পা।। আমান ভয়ে ঢুক গিলে বলে এই রে সেড়েছে,, আগে একটা ভুত্নী ছিলো এখন চারটি ভুত ও যোগ হলো আজ তো ড . ঝটকাও আমাকে বাঁচাতে পারবেনা। আর আব্দুল্লাহ শা* লে কা* মি* না নিজের ফেমিকা কা নিয়ে কেটে পরেছে আমাকে বিপদের মুখে ফেলে।। একবার তোকে পেয়ে নেই বেটা দেখবি তোর জুস বানিয়ে খাবো আমি।। তখনই ভারি পুরুষালি কন্ঠে কেউ বলে উঠে,,, দয়া করে এই রুমে যারা লুকিয়ে আছেন বেরিয়ে আসুন। আমি আপনাদের সাহায্যের জন্য এসেছি। ভয় পাবেন না আমি খারাপ কিছু নাহ,, আপনাদের মতোই একজন মানুষ।। আব্দুল্লাহ কান খাড়া করে শুনছিলো কথাটা তখনই তাসলিমার জ্ঞান ফিরে,, সে অন্ধকার দেখে চিক্কুর মারতেই যাবে তখনই আব্দুল্লাহ তার মুখ চেপে ধরে।। আমান ভালো করে তাকিয়ে দেখে কালো পেন্ট কালো সু পরা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে তার পাশে পায়ে খড়ম পরা তিনজন ধুতি পরা লোক।। আমান চিন্তা করে সেকি বেরুবে না কি করবে!! পুরুষ টি আবারও বলে উঠে আপনারা দয়া করে বেরুন আমাদের হাতে সময় নেই। আমরা বিন্দু কে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারবো না। তারাতাড়ি বের হয়ে আসেন প্লিজ..!! এবার আব্দুল্লাহ, তাসলিমা আলমিরা থেকে বেরিয়ে আসে,, আমান ও খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আসে। তারা দেখতে পায় সুদর্সন করে একটা লোক তাদের সামনে দাঁড়িয়ে,,। তার পাশেই কালো ধুতি পাঞ্জাবি পরা তান্ত্রিক আর তার চেলাপেলা। আব্দুল্লাহ বলে আপনি কে?? লোকটা বলে আমি রেজওয়ান শিকদার। এই হাভেলির মালিক। আর ইনি হলেন তান্ত্রিক অম্বল আর তার সাথে উনার লোক। আমান বলে ওই ভুত্নী কোথায়?? আপনারা এই হাভেলিতে প্রবেশ করলেন কি করে?? একটুর জন্য আমি বাঁচতে বাঁচতে মরেছি,,। আব্দুল্লাহ বলে অজভুত বল মরতে মরতে বেঁচেছি।। আমান বলে সেটাই,।। তাসলিমা বলে আমি আছি কারো কিছু হতে দিবো না এই দেখো আমি কি নিয়ে এসেছি,, বলেই একটা প্লাস্টিকের খুলি বের করে বলে,, আমার কুরি বছরের অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে ওই ভুত্নীকে পিটিয়ে মেরে ফেলবো।। আমান বলে চুপ যা বইন,,।। তোর কিছু করা লাগবেনা।। আব্দুল্লাহ বলে আহ থামো দুইজন। আপনি বলুন আপনি এই হাভেলির মালিক হলে ওই মহিলা নিশ্চয়ই আপনার বউ হবেন? নিশ্চয়ই আপনি উনাকে নির্যাতন করে মেরেছেন আর সেই জন্য উনি ভুত হয়ে আপনাকে মেরে প্রতিশোধ নিতে এই হাভেলিতে অপেক্ষা করছেন আর নিরিহ মানুষ কে মারছেন তাইতো?? সাধারণত এই প্রশ্ন গুলোই সবাই করবে কিন্তু আমি জানি আপনি তেমন কিছুই করেন নি। এসবের পেছনে অন্য ব্যখ্যা আছে এম আই রাইট?? রেজওয়ান শিকদার হেসে বললেন আপনি অনেক বুদ্ধিমান,,। হ্যাঁ এসবের পেছনে অন্য কারণ আছে।। তাসলিমা বলে কি কারণ?? রেজওয়ান শিকদার বলতে শুরু করেন তার কাহিনি.. আমি রেজওয়ান শিকদার এই হাভেলির উত্তরাধিকার,, বাবার সুত্রে এই হাভেলিটি আমি পেয়েছি। তরুণ বয়েসে প্রেমে পরি বিন্দুর।। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলাম আর বিন্দু সাইকোলজি বিভাগের ছাত্রী।। আমাদের প্রেম শুরু হয় ভার্সিটি থেকেই। তারপর যথা সময়ে বিয়ে। সব ঠিকঠাক ই চলছিলো। কিন্তু যত দিন যাচ্ছিলো বিন্দুর মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করছিলাম। যেমন সে মাঝে মাঝে নিজেকে নুরি ভাবতো,, নুরি ততকালীন সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা।। নুরির মতো কথা বলতো তার মতো অভিনয় করতো। আবার মাঝে মাঝে নিজেকে আশা ভাবতো,, আশা ছিলেন আমাদেরই এক ব্যাচ মেট। যিনি আমারই কলিগ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। আবারও কখনো নিজেকে লতা বলে সম্মোধন করতো।। কখনো লিজামনি ভাবতো। একেক কারেক্টারের একেক রকম বিহেভিয়ার দেখাতো। আমি প্রথমে প্রথমে আমলে না নিলেও বাধ্য হলাম তখন যখন দেখলাম বিন্দু নিজের পরিচয় ভুলে যাচ্ছে। সে ভুলেই গেছে সে যে বিন্দু,, এমনকি আমাকেও। আব্দুল্লাহ বললো তারপর..??? তারপর তাকে এক নাম করা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখালাম। তিনি তাকে দেখে বললেন তার মানষিক রোগ হয়েছে। অতিরিক্ত কল্পনা প্রবন আর বাস্তবিক লাইফ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে সে তার নিজের মতো কল্পনায় একটা জগৎ সাজিয়েছে। আর সেভাবেই সে থাকছে কল্পনায়। এমন চলতে থাকলে তার জন্য খুব খারাপ হবে এটা। তাই তিনি তাকে কিছু ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করে দিলেন। আমিও ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। সে ওষুধ খেতে চাইতো না তাকে জোর করে গেলানো লাগতো। সেই থেকে তার মনে এবং মস্তিষ্কে প্রভাব পরলো সে ভাবতে লাগলো আমি অত্যাচারী পুরুষ। তাকে বন্দী করে রেখেছি,, এবং নির্যাতন করছি। সে নিজেকে তেমনই বন্ধীনি জাহির করতে লাগলো। আর আমার প্রতি আক্রমণাত্বক হয়ে উঠলো। হাতের কাছে যা কিছু পেতো তাই ছুরে মারতো। এক পর্যায়ে সে সন্দেহ পোষতে লাগলো তার মনে ; যে আমি অন্য নারীর প্রতি আসক্ত কিন্তু সম্পূর্ণ তার ভ্রান্ত ধারণা ছিলো।। এভাবেই যাচ্ছিলো আমাদের দিন। তাকে জোর করে ওষুধ গেলানোর ফলে সে আমাকে একবার ছুরি দিয়ে আঘাত করে। আমি সেবার কোনো রকমে বেঁচে ফিরি। তারপর অনেক ড. বদলিয়ে বদলিয়ে দেখিয়েছি কিন্তু তার কোনো উন্নতি হচ্ছিলো নাহ। বরং অবনতি হচ্ছিলো আরও। তারপর আমি সিদ্ধান্ত নেই তাকে নিয়ে আমেরিকা চলে যাবো সেখানে গিয়ে আরও ভালো কোনো ড. দেখাবো। আমি তাকে এতোটাই ভালোবাসতাম যে আমার সব ধ্যান ধারণার মধ্যে শুধু সেই থাকতো। যথারীতি আমেরিকা যাওয়ার ব্যবস্থা করি পরদিন ভোর ৪ টায় আমাদের ফ্লাইট ছিলো। আমি সব গোছগাছ করে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ সারতে শহরে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাসায় এসে যা দেখলাম তাতে আমার পুরো দুনিয়া উলটে গেলো। আমার চোখের সামনে আমার বিন্দু আমার ভালোবাসার লাশ বেডরুমের ফ্যানের সাথে ঝুলছিলো। আমি পুরো ভেঙে পরি। এর পরের দিন গুলো আমার দুর্বিষহ হয়ে উঠে,, বিন্দুকে হারিয়ে মানষিক ভাবে ভেঙে পরি,, সিদ্ধান্ত নেই আমেরিকা চলে যাবো এইসব কিছু থেকে দূরে পালিয়ে যাবো। যথারীতি হাভেলিটি লিজে দিয়ে আমি পারি জমাই আমেরিকায়। আমার দিন গুলো ধিরে ধিরে স্বাভাবিক হচ্ছিলো কিন্তু কয়েকমাস যেতেই আমি দেশ থেকে খবর পাই হাভেলিতে অস্বাভাবিক কিছু হচ্ছে। তৎক্ষণাৎ দেশে ফিরে আসি। এবং হাভেলিতে থাকা শুরু করি। কিন্তু তখনই উপলব্ধি করি বিন্দু ফিরে এসেছে,, আর সে ভয়ংকর ভাবেই ফিরে এসেছে।। এরপর শুরু হয় বিন্দুর হত্যা যজ্ঞ।। যে বা যারাই এই হাভেলির কথা চর্চায় রাখতো তাদের মস্তিষ্ক কন্ট্রোল করে নিতো সে,, তারপর তাদের বাগিয়ে এই হাভেলিতে আনতো। তাদের মস্তিষ্ক কন্ট্রোল করে নিজের কল্পনা করা চিত্র গুলো দেখাতো। শেষমেশ হাভেলিতে যে বা যারাই প্রবেশ করতো তাদের ই নির্মম ভাবে হত্যা করতো। আব্দুল্লাহ সব শুনে বলে তাহলে আমরা এখানে আসার পর আমার সাথে যা যা হয়েছে তা কি নিছক ই দুঃস্বপ্ন ছিলো?? সেগুলো অতীতে ঘটিয়েছে বিন্দু। সে যাদের হত্যা করেছে তাদের খুনি সে আমাকে মানে। আর সে অনুযায়ীই তার মস্তিষ্কে একটা চিত্র এঁকেছে আর তাই তোমার মস্তিষ্ক কন্ট্রোলের মাধ্যমে দেখিয়েছে। সব বুঝলাম কিন্তু বিন্দু দেখতে কেমন ছিলো?? আর প্রাসাদে যে পেইন্টিং তাতে তো নুরির চিত্র। সেটা নুরি নয় বিন্দুর চিত্র। নুরির কোনো চিত্রই এই প্রাসাদে নেই। তদুপরি বিন্দু ও নুরিকে কখনো দেখেনি কেবল তার কথার প্রেমে পরেছে। তাই সে নিজেকে নুরি ভাবলেও নুরির রুপ নিজের মধ্যে আনতে পারেনি।। আমান বললো আপনারা এখানে প্রবেশ করলেন কি করে?? আর এখন বিন্দু কোথায়?? রেজওয়ান শিকদার বলেন তুমি যখন দৌড়ে এই কক্ষে প্রবেশ করেছিলে তখনই এই হাভেলিতে আমরা প্রবেশ করি। এবং তান্ত্রিক অম্বল তার মন্ত্রবলে বিন্দু কে আটকে রেখেছেন। তবে ভোর হওয়ার আগেই আমাদের বাকি কাজ করতে হবে তাই আর সময় নষ্ট না করে নিচে চলো। তোমরা সবাই বেরিয়ে যাবে হাভেলি থেকে বাকি কাজ তান্ত্রিক করবেন।। তাসলিমা বললো আমিও তন্ত্রসাধনা করেছি আমিও আপনাদের সাহায্য করবো।। রেজওয়ান শিকদার ভ্রু কোচকে বলেন কিন্তু দেখে তো মনে হয়না!! তা কিভাবে শিখেছেন?? কিভাবে আবার,, ইউটিউব দেখে দেখে বলেই ভ্যাবলা হাসি দিলো তাসলিমা।। সবাই মুখ টিপে হেসে দিলো। আমান বললো আপনাকে আর কষ্ট করতে হবেনা। তান্ত্রিক সাহেব যা করার করবেন।। আব্দুল্লাহ বললো তাহলে নিচে চলুন আর দেরি না করি আমরা কারণ ভোর হতে আর ২০ মিনিট বাকি...!! তখনই নিচ থেকে বিন্দুর গর্জন শোনা গেলো। সে গলা ফাটিয়ে চিতকার করছে আর তান্ত্রিক কে গালাগাল করছে। সবাই নিচ তলায় নেমে আসে। আমরা দেখতে পাই,,. বিন্দু এখন স্বাভাবিক শরীরে ফিরে এসেছে,,।। তার চারপাশে সাদা কিছুর গুড়ো দিয়ে একটা গোলক আঁকা হয়েছে আর তার ভেতরেই সে দাঁড়িয়ে চিতকার করছে,, বেরুতে পারছেনা,,। রেজওয়ান শিকদার কে দেখেই বিন্দু চিতকার করা শুরু করেছে। আর বলছে তুই মরবি তোর সাথে ওরা সবাই মরবে...!! রেজওয়ান শিকদার বলেন তোমরা বাইরে চলে যাও ওকে তান্ত্রিক বুঝে নিবে।। তোমাদের এখানে থাকা সেইফ নাহ।। আমান বলে দোস্ত চল যাইগা।। আব্দুল্লাহ বলে নাহ এই হাভেলিতে যখন এসেই পরেছি সব কিছুর শেষ দেখে তবেই যাবো।। তাসলিমা আর আমান ও আব্দুল্লাহর কথায় চুপসে গেছে। রেজওয়ান শিকদার বলেন কিন্তু আমি তোমাদের বিপদে ফেলতে পারিনা।। আমান বলে আব্দুল্লাহ ঠিক বলেছে আমরা যাচ্ছি না। আপনি কিভাবে কি করবেন করুন তান্ত্রিক মশাই।। তান্ত্রিক বললেন ঠিক আছে তোমরা সবাই ওই আগুন কুন্ডের চারপাশে গোল হয়ে বসো আমি আসছি। সবাই গিয়ে আগুন কুন্ডের চারপাশ ঘিরে বসে থাকে। এদিকে আগে থেকেই তান্ত্রিকের দুইজন লোক নিচে সব কিছু রেডি করে নিয়েছিলো। তারা চারজন বসে একাধারে মরণবাণ মন্ত্র উচ্চারণ করতে থাকে তান্ত্রিকের আদেশে। মন্ত্র পড়ার কারণে বিন্দুর শরীর নীল বর্ণ ধারণ করছে,,।। তার কোনো শক্তি কাজে আসছেনা।। তান্ত্রিক তার ক্রিয়াকর্ম শুরু করে দিয়েছেন। তিনি আগুন কুন্ডে আহুতি দিচ্ছেন আর মন্ত্র জপ করে যাচ্ছেন। বিন্দু চিতকার করে সব থামাতে বলছে। আর ছটফট করছে তার চেহারা একে একে লতা, আশা, নুরি, লিজামনির রুপ ধারণ করছে।। ভোরের আলো ফুটতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি,, তান্ত্রিক আর তার লোক মন্ত্র উচ্চারণের গতি বারিয়ে দিয়েছেন। তান্ত্রিক হঠাৎ বলে উঠলেন আপনারা ৪ জন এই আগুন কুন্ডে রক্ত বলি দেন তবেই এই মরণবাণ মন্ত্র কার্যকর হবে আত্মার উপর।। কারণ আপনারা সবাই ওই আত্মার বশে ছিলেন তাই আপনাদের রক্তেই মরণবাণ মন্ত্র শক্তিশালী হবে।। সবাই একে একে হাত কেটে রক্ত বলি দিতে লাগলো আগুন কুন্ডে,,।। এদিকে বিন্দুর ছটফটানি বেরেই যাচ্ছে।। সে গুঙিয়ে গুঙিয়ে বলছে কাউকে ছাড়বো না আমি বন্ধ কর বন্ধ কর বলছি এসব।। সবাই রক্ত আহুতি দেওয়ার পর হঠাৎ একটা কালো ধোঁয়া আগুন কুন্ড থেকে পাকিয়ে উঠে বিন্দুর শরীরে প্রবেশ করলো। কয়েক সেকেন্ড সব নিশ্চুপ হয়ে গেলো। হঠাৎ ঠাস ঠাস করে বেলুন ফাটার মতো বিন্দুর শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে হাওয়া মিশে যেতে লাগলো।। তান্ত্রিক শেষ বারের মতো কিন্তু মন্ত্র উচ্চারণ করে এই হাভেলি টি বন্ধ করে দিলেন। তারপর রেজওয়ান শিকদার কে বললেন আপনার স্ত্রীর আত্মা নষ্ট হয়ে গেছে আর এই হাভেলি ও এখন বন্ধ তাই ভয়ের কিছু নেই আপনারা এখন নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।। তান্ত্রিক কে রেজওয়ান শিকদার তার পাওনা বুঝিয়ে দিলে সে তার লোক নিয়ে চলে যায়। রেজওয়ান শিকদার মায়াভরা চোখে পুরো হাভেলিটি একবার দেখে নেন তার চোখে চিকচিক করে এক ফোটা জল!! আমান বলে সব বুঝলাম কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন আমরা এখানে আটকা পরেছি?? রেজওয়ান শিকদার হেসে বললেন কারণ আজ পূর্নিমার রাত,, আর এই রাতেই বিন্দু মানুষকে বসে এনে এই হাভেলিতে নিয়ে আসে। আমি বিগত ৪০ বছর ধরে চেষ্টা করছি কিন্তু আমি আসার আগেই সে ওইসব মানুষ দের হত্যা করে ফেলতো। কিন্তু ভাগ্যক্রমে আজ সময় মতো পৌছে গেছি। আব্দুল্লাহ গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবছিলো। তাসলিমা বললো কি ভাবছো তুমি?? হতেও তো পারে এইসব কিছু ধোকা আসলে তেমন কিছুই হয়নি এখানে। সব আমাদের মস্তিষ্কের ভয় ছিলো। বললো কথাটা আব্দুল্লাহ..!! আমান বলে শা*লা তোর শিক্ষা হয়নি নাহ?? তোরে তো আমি বলেই ঘুসি মারে আব্দুল্লাহ কে..!! তাসলিমা হেসে দেয়।। আব্দুল্লাহ ও হাসছে।। রেজওয়ান শিকদার বলেন পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই আছে বিশ্বাসের অযোগ্য তবুও আমাদের পরিস্থিতিতে পরে বিশ্বাস করতে হয়। হয়তো এইসব ও বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে পরিস্থিতি আমাদের।। আব্দুল্লাহরা সবাই হাভেলি থেকে বেরিয়ে আসে। তারা বেরুতেই ঠাস করে হাভেলির দরজা অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়।। রেজওয়ান শিকদার তার গাড়ি করে চলে গেছেন। আমান আর তাসলিমা বলে কি এবার বিশ্বাস হয়েছে তো?? ভুত প্রেত বলতে আসলেই কিছু আছে!! আব্দুল্লাহ মাথা চুলকে বলে হয়তো বা হয়তোবা নাহ!! আমান আর তাসলিমা মাথায় হাত দেয় আব্দুল্লাহর খাপ ছাড়া উত্তর শুনে..!! ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে,, আব্দুল্লাহর হাতে হাত রেখে তাসলিমা হেটে চলেছে,, সাথে আমান ও হেটে চলেছে। আজ নতুন ভাবে একটা সকাল হলো,, সূর্যের আলো তির্যক রশ্মি ফেলে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে...!! সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন