ভয়ংকর ভুতের গল্প (ভয়ংকর হাভেলি (পর্ব-১) )

 ভয়ংকর ভুতের গল্প (ভয়ংকর হাভেলি (পর্ব-১) )



প্রথম পর্ব,,, একপ্রকার বাধ্য হয়েই আব্দুল্লাহর সাথে যাচ্ছে আমান। সে বিরবির করে কয়েকটি গালি বকে পিছু পিছু যাচ্ছে আব্দুল্লাহর। আব্দুল্লাহ শহরের শেষ মাথার নির্জন গলি দিয়ে প্রবেশ করেছে তাদের উদ্দেশ্য রক্ত পিপাসু খ্যাত সেই হাভেলি,, যা বিগত ৪০ বছর ধরে লোকমুখে প্রচলিত যে এই হাভেলি একটা জীবন্ত হাভেলি। এখানে যে একবার প্রবেশ করে সে জান নিয়ে বেরুতে পারেনা।। কিন্তু কেন এবং কি কারণে তা আজ পর্যন্ত এর ব্যাখ্যা কেউ দাড় করাতে পারেননি।। আব্দুল্লাহ তাসলিমার সাথে বাজি ধরেছে। তাসলিমা তার প্রেমিকা এবং জ্বিন ভুত বিশেষজ্ঞ ও বলা যায়। তার কাছে রাজ্যের ভৌতিক কাহিনি এবং গল্প পাবেন যার কোনো সত্যতা সে নিশ্চিত করতে পারেনি কখনো। কিন্তু নিজেকে নিজে গর্ব করে নাম দিয়েছে ভুত প্রেত ভাগাউ তাসলিমা। যদিও হাস্যকর তবুও এই উজবুক কে মেলা ভালোবাসে আব্দুল্লাহ। আব্দুল্লাহ বাস্তববাদি একটা ছেলে,,।। আর চার পাঁচটা ছেলের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পড়ালেখায় যেমন পটু তেমন কথাবার্তা ও সাবলিল। কিন্তু তার সম্পূর্ণ উল্টো আমান। আমান আব্দুল্লাহর বেস্ট ফ্রেন্ড। আমান পেশায় একজন ডেন্টিস্ট। শহরের একটা নাম করা হাসপাতালে তার একটা কক্ষ বরাদ্দ আছে। আব্দুল্লাহ পেশায় একজন রাইটার,, সে রহস্য ভালোবাসে তার চেয়েও বড় কথা সে ভুত প্রেতে মোটেও বিশ্বাসী নয়। তার গল্প এবং লেখার মূল উদ্দেশ্য থাকে অন্ধবিশ্বাস কে দূর করে সব কিছুর একটা সুন্দর তম ব্যখ্যা দাড় করানো। আর এই স্বভাবের জন্যই সে আজ দাঁড়িয়ে আছে রক্ত পিপাসু হাভেলির সামনে। হয়েছে কি আজ সকালেই তাসলিমা আব্দুল্লাহ কে যখন এই হাভেলির ব্যাপারে বলে। তখন একপ্রকার বাকবিতন্ডা হয়ে যায় এই প্রেমিক যুগলের মধ্যে। এর কারণ অবশ্য তাসলিমার জেদি এক রোখা স্বভাব আর আব্দুল্লাহর সব ক্ষেত্রে যুক্তি খোঁজা। তাসলিমা যখন তার যুক্তি দার করাতে ব্যর্থ তখন একপ্রকার রাগের বসেই আব্দুল্লাহর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় যে,, সে এই হাভেলির রহস্য ভেদ করে যেন বৈজ্ঞানিক উপায়ে এর ব্যখ্যা দার করায়।। এতক্ষন অতীত বিশ্লেষণ করলাম এখন চলে আসবো বর্তমান দৃশ্যে...!! আব্দুল্লাহর পেছনে আমান দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপছে। তার এইসব ভুত প্রেত অনেক ভয় লাগে। তবুও প্রিয় বন্ধুর এক কথাতেই তার সাথে ছুটে এসেছে। আমান কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে আব্দুল্লাহ দোস্ত এখনো সময় আছে চল এখান থেকে চলে যাই। ভাবি কিচ্ছু জানবে না কথা দিলাম, তুই একটা যুক্তি তোর মতো করে দাড় করাই দিস আমি তোরে সাপোর্ট দিবো। কিন্তু এখন চল ভাই জাইগা এহান থাইক্যা পিলিজ। আব্দুল্লাহ ঠায় দাঁড়িয়ে হাভেলিটি বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। রঙচটা আর ধুলো মাখা হাভেলিটি আসলেই ভৌতিক ফিলিংস দিচ্ছে। হাভেলির প্রবেশ প্রথের গেইটটা এক পাশ ভাঙা। গেইট পেরুলেই চোখে পড়ছে একটা পরিত্যক্ত ফোয়ারা। যার মূল আকর্ষণ একটা সিংহের ভাস্কর্য,, যার মুখ দিয়ে পানির ফোয়ারা বইছে। ফোয়ারাটার পানির রঙ কুচকুচে কালো তা থেকে মরা পঁচা একটা গা গুলানো গন্ধ আসছে। আরেকটা জিনিস বিশেষ ভাবে নজর কাড়ছে তা হলো হাভেলির মেইন ফটকের সামনে খুদাই করে আঁকা একটা উলঙ্গ রমনীর চিত্র। যার সারা অঙ্গ বিবস্ত্র কিন্তু মাথায় শোভা পাচ্ছে হিরের মুকুট।। পরিত্যক্ত হাভেলি যেমন নোংরা আর ভৌতিক মনে হয় এই হাভেলিও তেমনই তাই আর মাথা ঘামালো না আব্দুল্লাহ। সে আমানের দিকে তাকিয়ে বললো এসেই যখন পরেছি তখন এই প্রাসাদের রহস্য ভেদ করেই তবে যাচ্ছি। আয় ভেতরে গিয়ে দেখি তোর জন্য কোনো পিশাচীনিকে পটাতে পারি কিনা। বলেই আমানের হাত ধরে টেনে ভাঙা গেইটের অপর পাশ ধাক্কা দিয়ে খুলে ভেতরে প্রবেশ করে।। ভাঙা গেইটটা খুলতেই ক্যাত করে একটা শব্দ হলো,, এই সামান্য শব্দও এমন নিস্তব্ধ নির্জন হাভেলিতে আলাদা একটা ভয়ের সঞ্চার করে গেলো।। আমানের শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা হাওয়া খেলে গেলো। ভয়ে তার অবস্থা কাহিল। তার মন বার বার কু গাইছে। কিন্তু আব্দুল্লাহ এর বিপরীত তার ভয়ের চেয়ে বরঞ্চ রোমাঞ্চকর লাগছে এই পরিবেশ। সে বলে দোস্ত এই জায়গাটা কাপলদের জন্য একেবারে পারফেক্ট দূর আগে জানলে তাসলিমাকে নিয়েই আসতাম। তাসলিমার কথা মনে হতেই সে ফোন বের করে তাসলিমার নম্বর ডায়াল করে কল দেয়। দুবার রিং হতেই অপর পাশ থেকে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে কি হয়েছে? এতো রাতে কল করলা যে? সব ঠিক আছে তোহ? - হ্যাঁ জানেমান সব ঠিক তোমাকে মিস করছিলাম তাই কল করছি। - হুম এখনো ঘুমাও নি?? - কেমনে ঘুমাই জান তুমি না চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিছো ওইটা না শেষ করে তো ঘুম আসছিলো নাহ। তাই ছুটে এলাম হাভেলি তে উফস রক্ত পিপাসু হাভেলিতে হা হা হা।। আব্দুল্লাহর মুখে হাভেলির কথা শুনে তাসলিমার ঘুম উবে গেলো। সে ধড়াম করে উঠে বসে অস্তিরচিত্তে বলে কি বলছো কি তুমি?? তুমি কি পাগল হইছো?? - হ্যাঁ জানেমান তোমার জন্য পাগল। তাইতো তোমার কথা রাখতে চলে এসেছি। - আব্দুল্লাহ প্লিজ তুমি বাসায় চলে আসো আমার ভুল হয়েছে,, আমি রাগের মাথায় তোমাকে বলেছি প্লিজ চলে আসো ওই হাভেলি ভালো নাহ। ওই হাভেলিতে....!! - হ্যালো তাসলিমা শুনতে পাচ্ছো?? - হ্যালো আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ?? শুনতে পাচ্ছো তুমি?? কথার মাঝ খানেই টুট টুট শব্দ করে লাইন কেটে যায়। আব্দুল্লাহ আবারও ডায়াল করতে নিলে দেখে ফোনে নেটওয়ার্ক নেই। কয়েকবার চেষ্টা করেও বিফলে যায়..!! আমান কে বলে দেখতো দোস্ত কেমনডা লাগে এখনই নেটওয়ার্ক যাওয়ার ছিলো।। বলেই পাশ ফিরে তাকাতে দেখে আমান নাই। চারপাশে তাকিয়ে আমানের নাম ধরে ডাকে কিন্তু তার কন্ঠস্বর তার কাছেই প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে। আব্দুল্লাহ হাভেলির চারপাশে চোখ বুলায় হঠাৎ তার নজরে আসে আমান হাভেলির মেইন ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। আব্দুল্লাহ স্বস্তির নিশ্বাস নেয় তারপর হেসে ডাকে আমান?? কিন্তু আমানের কোনো সাড়া নেই,, এবার আব্দুল্লাহ এগিয়ে ফটকের সামনে যেতেই আমান মেইন ফটক ভেদ করে ভেতরে চলে যায়। আব্দুল্লাহ এমন দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।

এদিকে আব্দুল্লাহর ফোন কেটে যাওয়ার পর তাসলিমা অস্তিরতা করছে। সে কি করবে না করবে ভাবতে ভাবতে স্থীর হয় সেও যাবে সেই হাভেলিতে। হাতে একটা ব্যাগ নিয়েছে যাতে তন্ত্রসাধনার কিছু সরঞ্জাম আছে যা সে ইউটিউব দেখে দেখে শিখেছে। তাসলিমা হাত ঘড়িতে টাইম দেখে নিয়েছে। এখন বাজে রাত আড়াই টা..! তার কলিজা কেঁপে উঠছে আব্দুল্লাহ কে সে এ কোন বিপদের সামনে ফেলে দিলো। সে নিজেই নিজেকে বকছে। তারপর পা টিপে টিপে বাসার গেইট খুলে চাদর মুরি দিয়ে বেরিয়ে পরে...!! আব্দুল্লাহ এখনো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কিভাবে সম্ভব? আমান দরজা ভেদ করে কিভাবে হাভেলিতে প্রবেশ করতে পারে?? নাকি এটা তার মনের ভ্রম হয়তো এই হাভেলি নিয়ে বেশি চিন্তা করছে তাই চোখে ভুল দেখেছে। তার ভাবনার মাঝেই ক্যাচক্যাচ আওয়াজে হাভেলির মেইন ফটকটি খুলে যায়। ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার,, আব্দুল্লাহ পা বাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। হাভেলির ভেতরে প্রবেশ করতেই তার শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেলো। হঠাৎ এমন হওয়ার আব্দুল্লাহ ফ্লোরে পরে যায়। কয়েক দন্ড স্থীর থেকে আবারও উঠে দাঁড়িয়েছে সে। পকেট থেকে ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে চারপাশে তাকায়। চারপাশে মাকড়সার জালে জড়িয়ে আছে। আসবাব গুলোর উপর ধুলোমাখা সাদা কাপড়। ধুলো আর গাছের পাতায় পায়ের গোড়ালি অব্দি ঢেকে গেছে। আব্দুল্লাহ কাপড় ঝেড়ে সামনে আগায়। হাভেলিটি দ্বিতল বিশিষ্ট। নিচে সুবিশাল বসার কক্ষ,,।। মাঝ দিয়ে উঠে গেছে সিড়ি,, আব্দুল্লাহ সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। দুতলায় উঠার পরই তার নজরে আসে একটা বিশাল চিত্র,,।। ফোনের ফ্ল্যাশলাইটের আলোতে স্পষ্ট দেখতে পায় এটা সেই রমনীর চিত্র যা তারা হাভেলির মেইন ফটকে দেখেছিলো। চিত্রটি যে এঁকেছে সে মনের মাধুর্য মিশিয়েই এঁকেছে। এতো সুন্দর ভাবে চিত্র ও আঁকা যায়?? আব্দুল্লাহ এক মনে চিত্রটি দর্শন করে যাচ্ছে। কি সুনিপুণ আর নিখুঁত ভাবে আঁকা এই মানবীর চিত্র,, উপরওয়ালা নিশ্চয়ই সবচেয়ে সুন্দর আর পরিস্কার মাটি দিয়ে তাকে তৈরি করেছেন। আব্দুল্লাহর ভাবনার মাঝেই তার পেছনে কারো উপস্তিতি টের পায়। ঘুরে তাকিয়ে দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন চিত্রের নারীটি। মিষ্টি করে হেসে আব্দুল্লাহর দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে। আব্দুল্লাহ উপর থেকে নিচ রমনীকে পর্যবেক্ষন করে যায়। কি সুন্দর এই নারী চিত্র থেকে বাস্তবে আরও বেশি সুন্দর। আব্দুল্লাহ মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে দেখছে তাকে। সে তার হুশে নেই যেন সেই রমনী তাকে বশ করে নিয়েছে। হঠাৎ আব্দুল্লাহ মনে তাসলিমার চেহারা ভাসতেই সে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে এবং সামনে তাকিয়ে দেখে সেখানে কেউ নেই....!! এবার আব্দুল্লাহ একটু ঘাবড়ে যায়,, সে স্পষ্ট দেখেছে এই রমনীকে তাহলে সে কোথায় গেলো?? আব্দুল্লাহ চারপাশে তাকাতে থাকে। কিন্তু কোথাও নেই সেই রমনী। হঠাৎ পাশের রুম থেকে ঝগড়াঝাটির আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো,, আব্দুল্লাহ ধির পায়ে সেদিকে পা বাড়ায়...!! চলবে??

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন