ভয়ংকর ভুতের গল্প (অভিশপ্ত পুরো গ্রাম (পর্ব - ২) )
পর্ব - ২
" রনি আর হাসানের দাদুর মৃত্যুতে গ্রামে আতংক ছড়িয়ে পড়লো । দিনের বেলাতেও কেউ বাঁশঝাড়ের ধারে কাছে ঘেষলো না । এভাবেই কেটে গেল কিছুদিন । সেদিন রাতের বেলায় মিতু নিজের ঘরে শুয়ে জানালা দিয়ে চাঁদ দেখছিলো ।
গরম বেশি পড়েছে বলে দরজাটা খোলাই ছিল । টেবিলের উপর হ্যারিকেনটা মৃদু আলো দিচ্ছে । তখন কালো একটা বিড়াল মিউ মিউ করতে করতে দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে খাটের নিচে চলে গেল ।
রনি দ্রুত উঁকি দিয়ে খাটের নিচে তাকালো । ওদিকে তাকিয়ে ওর গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল । ও দেখলো খাটের তলা থেকে ভয়ংকর আর বিশ্রী চেহারার কেউ একজন ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।
চোখ দুটো কোটরবিহীন , লাল টকটকে । রনি কিছু বুঝার আগেই একটানে ওকে খাটের নিচে টেনে নিয়ে গেল ।
একটু পরেই ওর বাড়িতে চেচাঁমিচি শুরু হল ; রনিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।
সবাই চারদিকে খুজঁতে লাগলো ওকে ।
হাসান সাত পাঁচ ভেবে বাঁশঝাড়ের কাছে গেল । চাঁদের আলোতে ও স্পষ্ট দেখতে পেল রনির লাশটা পড়ে আছে বাঁশঝাড়ের মাঝখানে ।
চিৎকার দিল হাসান । ওর চিৎকার শুনে সবাই ছুটে আসলো বাঁশঝাড়ের কাছে । রনির লাশটা বাড়িতে নিয়ে আসা হল । ওর চোখদুটো এখনও খোলা । আর চোখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ ; দেখে মনে হচ্ছে ওর চোখগুলো কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে ।
ওর গলাতেও একই রকম আঙ্গুলের লাল ছাপ দেখা গেল । রাতে হাসান নিজের ঘরে শুয়ে ভাবতে লাগলো রনির মৃত্যুর বিষয়টা । এত রাতে তো ওর বাঁশঝাড়ে যাওয়ার কথা না । তাহলে কি অদৃশ্য কিছু ওকে টেনে ওখানে নিয়ে মেরে ফেলেছে !!
কিন্তু মারবে কেন ? দাদু তো বলেছিল কালো বিড়াল থেকে সাবধানে থাকতে । তাহলে কি এগুলোর পিছনে কালো বিড়ালের কোন রহস্য লুকিয়ে আছে ? পরদিন সকাল । গ্রামের মানুষ একজন কবিরাজ এনেছে ।
কবিরাজকে খুলে বলা হল সমস্ত ঘটনা । সব শুনে তিনি বাঁশঝাড়ের কাছে গেলেন । চোখ বন্ধ করে মন্ত্র পড়তে শুরু করলেন । তখনই শোঁ শোঁ বাতাস বইতে লাগলো বাঁশঝাড়ে । বাতাসে একমাত্র শব্দ ছিল ভয়ানক কিছুর গর্জন এবং একটি বিড়ালের মায়াভরা শব্দ।
গ্রামের মানুষজন সব ভয়ে ছুটলো । কবিরাজ একটু পর চোখ খুললেন । তার চোখদুটো টকটকে লাল । বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন,"এই গ্রাম ছেড়ে তোমরা পালিয়ে যাও । না হলে ও কাউকে বাঁচতে দিবে না । সবাইকে মেরে ফেলবে ।"
তিনিও দ্রুত গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেন । হাসান খুব অবাক হল । কবিরাজ চোখ বন্ধ করে কি এমন দেখলো যে ভয়ে পালালো !! আবার সবাইকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বললেন !! ও কিছুই বুঝতে পারলো না ।
দুই দিন পরের কথা ।
ইতিমধ্যে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে । বাকি যারা গ্রামে আছে তারা সবাই ভয়ে ভয়ে বাড়িতেই থাকলো । সেদিন রাতে বশির মিয়া ঘুমাচ্ছিলেন ।
হঠাৎ তার গোয়ালঘর থেকে কিসের যেন ধস্তাধস্তির শব্দ শুনতে পেলেন । লন্ঠন হাতে ঘর থেকে বের হয়ে গোয়ালঘরের কাছে গেলেন । লন্ঠনের আলোতে তিনি যা দেখলেন তাতে ভয়ে তার শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হল । তিনি দেখলেন তার একটা গরু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে ; গরুর গলাটা কাটা , সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে ।
একটা কালো বিড়াল গরুর গলার উপর বসে রক্ত খাচ্ছে । চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন তিনি । চিৎকার শুনে তার স্ত্রী আর কিছু প্রতিবেশী ছুটে আসলো । তারা এসে কিছুই দেখলো না । শুধু দেখলো একটা কালো বিড়াল মিউ মিউ করে বাঁশঝাড়ের দিকে চলে যাচ্ছে ।
জ্ঞান ফিরলে বশির মিয়া সবাইকে বললেন ভয়ংকর সেই ঘটনা । ঘটনার বিশদ বর্ণনা শুনে ভয়ে সবার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো । হাসান বশির মিয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ভাবলেন: “গ্রাম ফাঁকা হওয়ার আগে আমাদের কিছু করতে হবে। আমি আমার দাদার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চাই এবং এই গ্রামটিকে বাঁচাতে চাই।”
এ গ্রামকে বাঁচাতে চাই ।"
এসব কথা ভাবতে ভাবতে ওর মনে পড়লো সেই কবিরাজের কথা । ও পা বাড়ালো কবিরাজের বাড়ির উদ্দেশ্যে......... হাসানকে দেখে কবিরাজ বলল,"কি ব্যাপার ? আবার কেন আসছো ? আমি তো বলেছি সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে যাও । এছাড়া আর কোন উপায় নেই ।"
হাসান শান্তকন্ঠে বলল,"
দেখুন, সবাই যদি গ্রাম ছেড়ে চলে যায় তাহলে এই গ্রাম শশ্মানে পরিণত হয়ে যাবে ।""
তাছাড়া গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলো গ্রাম ছেড়ে কোথায়-ই বা যাবে । ঘটনাটা আসলে কি একটু বলবেন ?" - তোমাদের গ্রাম একটি ভয়ানক, অতৃপ্ত আত্মার নিয়ন্ত্রণে আছে।
ও সবাইকে মেরে ফেলবে ।
কাউকে বাঁচতে দিবে না । আমার কন মন্ত্র ওকে বশে আনতে পারবে না । - কিন্তু কেন ? - এই প্রশ্নের উত্তরের সাথে জড়িয়ে আছে তোমাদের গ্রামের বহু বছরের পুরানো জমিদার বাড়ির রহস্য !! ওটা জানার জন্য খুব সাহসী কাউকে দরকার ।
- আপনি আমাকে বলুন ।
আমি আমার গ্রামের জন্য সবকিছু করতে রাজি আছি। কবিরাজ হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল ,"তোমাদের গ্রামের শেষে যে জঙ্গল আছে সেখানে পুরানো একটা জমিদার বাড়ি আছে । চিনো সেটা ?" - হ্যা, চিনি । সেখানে তো কেউ যায় না ।
অনেক পুরাতন আর ভাঙ্গাচুরা সেটা ।
- হুম, ঐ বাড়িতে একটা গুপ্তঘর আছে । ঐ ঘরে একটা বই আছে । মধ্যরাতে একা সেখানে গিয়ে বইটা আনতে হবে । ঐ বইতেই সব প্রশ্নের উত্তর আছে ।
- ঠিক আছে ।
ঐ বই আমি নিয়ে আসবো । - যতটা সহজ ভাবছো কাজটা তার থেকেও অনেক কঠিন । খুব সাহসী না হলে ঐ কাজ করা সম্ভব নয় ।
- কেন ? -
সেখানে যাওয়ার পথে আস্বাভাবিক ভয়ংকর অনেক ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে । কিন্তু সাহস হারানো যাবে না কিছুতেই । তাহলে নির্ঘাত মত্যু ।
আর কোন অবস্থাতেই পিছনে তাকানো যাবে না ; কেউ ডাকলেও তাকানো যাবে না । মনে রেখ এই কাজে যদি একবার বিফল হও তাহলে তোমাদর গ্রাম ঐ অভিশপ্ত আত্মা এক নিমিষেই শশ্মান বানিয়ে দিবে ।
- আমি যাবো ওখানে ।
এই গ্রামের জন্য আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত । কবিরাজ ওর পিঠ চাপড়ে একটা কবজ দিয়ে বলল,"এটা হাতে বেঁধে নেও ; এটা বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবে তোমাকে ।"
হাসান কবিরাজের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলো ।
চলবে.......
লেখনিতে : নাজমুল হাছান রবিন